সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয় - খেজুরের উপকারিতা

 

খেজুর, মধ্যেপ্রাচ্যের এই ফলটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত। খেজুর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ নানান পুষ্টিগুণ। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয় জানা প্রয়োজন। খেজুরের উপকারিতা অনেক। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, শরীরের আয়রনের ঘাটতি মেটাতে খেজুর খুবই উপযোগী। একই সঙ্গে খেজুরের মিষ্টান্ন, চিনির বিকল্প হিসেবে কাজ করে। 

সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়

আপনি কি জানেন সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়। বয়স যখন ৩০ এর কোঠায় তখন মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। আমাদের কর্মশক্তি হ্রাস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, পেশির সমস্যা, হৃদরোগ ও স্টকের ঝুঁকি বেশি, হজমের সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাড় ক্ষয় আরো ত্বকের নানা সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয় - খেজুরের উপকারিতা

খেজুরের উপকারিতা

খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আইরন, ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ নানা ধরনের পুষ্টি যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আসুন জেনে নিই এই ফলটি আমাদের শরীরে কি কাজ করে।

  • স্নায়ুতন্ত্রের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায় : খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকায় এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি করে, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়। এজন্য বেশি বয়সে স্মৃতিশক্তি লোপ করতে না চাইলে, প্রতিদিন খাবারের তালিকায় খেজুর রাখতে হবে।
  • গ্লুকোজের অভাব দূর করে : শরীরের গ্লুকোজের অভাব খেজুর দ্রুত বরণ করতে সাহায্য করে। বিশেষত রোজায় অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা হয় বলে দেহের প্রচুর গ্লুকোজ দরকার হয়। এজন্য সকল রোজাদারের ইফতারিতে খেজুর খাওয়া প্রয়োজন।
  • বদহজম দূর করে : আমাদের মুখের লালা কে ভালোভাবে খাবারের সঙ্গে মিশাতে সাহায্য করে খেজুর। ফলে আমাদের বদহজম অনেক অংশে কমে যায়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে : যেসব খেজুর একটু শক্ত, সেই খেজুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক দূর হয়ে যায়।
  • খুসখুসে কাশি দূর করে : সাধারণত যাদের খুশখুসে কাশি হয় তারা ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খেজুর নিয়ে গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে শরবত করে খেলে ১৫ দিনের মধ্যে খুসখুসে কাশি দূর হয়ে যায়।
  • ত্বককে টানটান করে : অনেক সময় বয়স বাড়ার ফলে মুখে চামড়া কুঁচকে যায়। খেজুরের ভিটামিন-বি রয়েছে যা ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪ থেকে ৫ টি খেজুর নিয়ম করে খেলে, ত্বকের চামড়া কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
  • হাড় শক্ত করে : খেজুরে উপস্থিত খনিজ এবং ভিটামিন, হাড় কে অনেক শক্ত করে তোলে এবং অস্টিওপোরোসিসের রোগের হাত থেকে বাঁচায়।
  • অ্যামোনিয়া রোগ দূর করে : খেজুর আয়রন সমৃদ্ধ তাই এটি অ্যামোনিয়ার মত রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলেই মূলত এ ধরনের রোগের উৎপত্তি বৃদ্ধি পায়। আর খেজুরে আয়রন থাকায়, খেজুর খেলে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। 
  • এলার্জির প্রকোপ কমায় : ২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলা হয়েছিল খেজুরের উপস্থিত সালফার কম্পাউন্ড এলার্জির মতো রোগ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত

খেজুরের স্বাস্থ্য ও উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা আছে। রমজান মাসে খেজুরের কদর অন্যান্য মাসের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এ সময় কম বেশি সবাই খেজুর খান। খেজুরে ফাইবার এবং কম ক্যালরি হওয়ায় খেজুর ওজন কমাতে সাহায্য করে। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে খেজুর খুবই উপযোগী। একটি খেজুরের পুষ্টির মান থাকে কার্বাস ৪৪ শতাংশ, ডায়েটারি ফাইবার ৬.৪ থেকে ১১.৫ শতাংশ, প্রোটিন ২.৩ থেকে ৫.৬ শতাংশ, চর্বি ০.২ থেকে ০.৫ শতাংশ। 

আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের আপেল খেলে কি হয় 

এছাড়াও খেজুরে থাকে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, তামা, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন। চলুন জেনে নেই, দিনে কয়টি করে খেজুর খাওয়া উচিত।

প্রতিদিন ৪-৫ টি খেজুর খেতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যের উপকারিতা মিলবে। ৪-৫ টি বা ১০০ গ্রাম খেজুরেই মিলবে প্রায় ২৭৭ ক্যালরি। শরীর সুস্থ এবং ঠিক রাখতে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি খেজুর খাওয়া প্রয়োজন।

খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়

ক্যালোরিতে ভরপুর খেজুরে একাধিক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। খেজুর আবার ফাইবারের সমৃদ্ধ আমাদের সুস্বাস্থ্য ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে উপযোগী। এতে উপস্থিত এন্টি-অক্সিডেন্ট নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে।বদহজমের প্লাবনতা থাকলে খাবার খাওয়ার পর খেজুর খাবেন না। আবার খেজুরের উপস্থিত সরবিটল নামক সুগার অ্যালকোহল মুভমেন্ট অত্যাধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। ডায়রিয়ার সমস্যা থাকলে খেজুর খাওয়া উচিত নয়।

খেজুর আবার ফ্রুক্টোস সমৃদ্ধ। তাই খেজুরে এলার্জি, ইরিটেবল বাওয়েল সিড্রোম ও সেনসিটিভিটির সমস্যা থাকলে খেজুর না খাওয়াই ভালো। আর কখনো বিকালে কিছু খাওয়া যাবে না।

খেজুর স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী স্ন্যাক্স, এজন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেজুর খাওয়া যেতে পারে। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পরিষ্কার করতে, হৃদয় ও লিভার সুস্থ রাখতে সকালে খেজুর খাওয়া খুবই উপযোগী এবং এটি খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়।

শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা হলো প্রতিটি খেজুর রয়েছে ২০থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীরা প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন একজন সুস্থ মানুষের দেহে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন তার প্রায় ১১ শতাংশ পূরণ করে খেজুর।

খেজুর শুকিয়ে খাওয়া হয় কারণ এতে পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। ড্রাই খেজুরে প্রচুর ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই এটি তাৎক্ষণিকভাবে স্টামিনা বাড়ায় যাতে শরীরের শক্তি আসে। খেজুর খেলে স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ করে এবং হাড় মজবুত করে। খেজুর হজম শক্তিও বৃদ্ধি করে।

খেজুর খাওয়ার অপকারিতা

  • অতিরিক্ত মাত্রায় খেজুর খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
  • প্রয়োজনের বেশি খেজুর খেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। কারণ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। 
  • অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ফলে বদহজম হতে পারে।

সর্বশেষে বলা যায় খেজুর মানুষের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। এই ফল যদি আপনি আপনার খাবার তালিকায় প্রতিদিনের জন্য রাখেন, তাহলে নানা ধরণের রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকা যাবে। হাড় মজবুত আর শক্ত হবে। আরও অনেক রকমের উপকার খেজুর থেকে পাওয়া যায়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url