কোন ভির্ভোসি মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তার কীভাবে চলাফেরা উচিত

তালাক আরবি শব্দটির অর্থ বন্ধনমোচন। ইসলামি পরিভাষায় বিধিসম্মত বিয়ে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন ছিন্ন হওয়ার নাম তালাক। অবস্থাভেদে স্বামী ও স্ত্রী উভয় পক্ষ থেকে তালাক দ্বারা বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হতে পারে। কোন ভির্ভোসি মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তার কীভাবে চলাফেরা উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

কোন ভির্ভোসি মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তার কীভাবে চলাফেরা উচিত

এছাড়াও কি কি কারণে তালাক হয়, চলে যাও বললে কি তালাক হয়, কোন ভির্ভোসি মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তার কীভাবে চলাফেরা উচিত এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন, তাহলে আজকের এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ কোন ভির্ভোসি মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তার কীভাবে চলাফেরা উচিত

  • কি কি কারণে তালাক হয়
  • চলে যাও বললে কি তালাক হয়
  • কোন ভির্ভোসি মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তার কীভাবে চলাফেরা উচিত

কি কি কারণে তালাক হয়

ইসলামে জীবনের বিপর্যয় থেকে স্বামী-স্ত্রীর রক্ষার জন্য তালাকের সুযোগ আছে। যখন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, তখন তাদের মধ্যে নানা বিধ বিরোধী উৎপন্ন হয় তখন তাদের শান্তিপূর্ণ এবং মিষ্টি জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে। যখন একজনের সঙ্গে আরেকজনের মনের মিল হয় না অর্থাৎ মন বিরোধী হয়। তখন তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইসলামে জায়েজ রয়েছে।

সমাজ ও সংস্কৃতি পরিবেশের উপর ভিত্তি করে তালাকের কারণগুলি বিভিন্ন রকম হয়। তবে সচরাচর যে কারণ গুলো দ্বারা তালাক হয় তার সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-

ধর্মীয় কারণেঃ ধর্মীয় কারণে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার রয়েছে। যদি স্ত্রী পক্ষে কোন মর্যাদা মত শর্তাবলী ভঙ্গন করা হয়ে থাকে বা সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট কোন নীতি-নিয়ম লংঘন করা হয়। স্বামীর কাছে স্ত্রীর পক্ষে মর্যাদাহীন পর্যায়ে অপরাধ হলে তালাক দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও, ধর্মীয় নীতি-নিয়ম অনুযায়ী কোন ধর্মীয় পর্যায়ে তালাকের অধিকার দেওয়া হতে পারে ।

অনৈতিক ক্রিয়াপদ্ধতিঃ অনৈতিক ক্রিয়াপদ্ধতি এবং বিশ্বাসঘাতক ক্রিয়াপদ্ধতির উপস্থিতি তালাকের একটি কারণ হতে পারে। যেমন, দ্বিপক্ষীয় বিশ্বাসঘাতক ক্রিয়াপদ্ধতির মধ্যে অদলবদল, অন্যায়পূর্ণ আচরণ বা সহজাতির ভঙ্গ রয়েছে। এই ক্রিয়াপদ্ধতির ফলে তালাক হতে পারে।

যৌন সমস্যাঃ যৌন সমস্যা তালাকের একটি কারণ হতে পারে। অসন্তোষজনক যৌন জীবন, যৌন পরিবর্তন, যৌন বিরক্তি ইত্যাদি যৌন সমস্যার উপস্থিতি তালাকের মধ্যে একটি প্রধান বা সহায়ক উদ্দীপন হিসেবে কাজ করতে পারে।

মনস্থিরতা ও মানসিক সমস্যাঃ মনস্থিরতা এবং মানসিক সমস্যা তালাকের একটি প্রধান কারণ হতে পারে।যেমন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত মতবিনিময় এবং মনস্থিরতার অভাব থাকলে তালাকের কারণ হতে পারে।

শয়তানের প্রবৃত্তিঃ শয়তান তালাক কে উৎসাহিত করে । মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে । সদিচ্ছা অধিকারে মার্জিত বিবাহ ও বিভাগের জন্য শয়তান প্রতিবাদ করে থাকে। প্রত্যেক প্রজন্মের মধ্যে শয়তানের প্রবৃত্তি রয়েছে, এর ফলে মুসলিম সমাজে তালাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে।

হারাম উপার্জন ও তালাকের মধ্যে সম্পর্কঃ হারাম উপার্জন এবং তালাকের প্রবণতা একে অপরকে প্রভাবিত করে। হারাম উপার্জন দ্বারা মানুষ আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। তাছাড়াও, হারাম উপার্জন দ্বারা কোন ইবাদত কবুল করা হয় না। ইসলামে হারাম উপার্জনে সমর্থন দেওয়া হয়নি, এবং এটি আমাদের পুরুষকে আদর্শ মুসলিম হিসাবে দেখা যায় না।

চলে যাও বললে কি তালাক হয়

কেউ যদি স্ত্রীকে বলে, ‘চলে যাও, তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই’। অথবা “যা চলে যা তোর আর থাকতে হবে না আমার বাড়ী” এবং ” যা ছেড়ে দিলাম”। যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তার যদি তালাকের নিয়াত থাকে, তাহলে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর তালাকের নিয়তসহ এরূপ ইঙ্গিতবহ বাক্য উল্লেখ করে তালাক প্রদান করাকে ‘কেনায়া তালাক’ বলে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/৩০২)।

যেমন- আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, জাওনের কন্যাকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর নিকট একটি ঘরে পাঠানো হলো আর তিনি তার নিকটবর্তী হলেন, তখন সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তো এক মহামিমের কাছে পানাহার চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও' (বুখারী হা/৫২৫৪; ইবনু মাজাহ হা/২০৫০)। আর এটাই ছিল তার জন্য তালাক।

কোন ভির্ভোসি মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তার কীভাবে চলাফেরা উচিত

কোন ভির্ভোসি মেয়ে বিয়ে করতে না চাইলে তার যে ভাবে চলাফেরা উচিত- কোন তালাক প্রাপ্তা অথবা বিধবা নারী যদি বিয়ে না করার কারণে জৈবিক চাহিদার ক্ষেত্রে হারাম কার্যক্রম ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না করে তাহলে তার জন্য পুনরায় বিয়ে করা আবশ্যক নয়‌। কিন্তু পাপাচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে পাপ থেকে বাঁচার স্বার্থে অথবা নিজের জীবনকে অনিরাপদ ভাবলে নিরাপত্তার স্বার্থে বিয়ের চেষ্টা করা কর্তব্য।

যাহোক, কোন তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা নারী যদি বিয়ে করতে না চায় তাহলে সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকবে, পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলবে, মাহরাম-নন মাহরাম মেইনটেইন করবে, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবে না,

জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে গেলে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে, প্রয়োজন ব্যতিরেকে কোন পর পুরুষের সাথে কথা বলবে না বা দেখা করবে না, জরুরি প্রয়োজনে এমন কারো সাথে কথা বলতে হলে কোমল কন্ঠ, হাসি-মজাক ইত্যাদি পরিহার করবে। কোন অবস্থাতেই পরপুরুষের সাথে নির্জনে যাবে না বা তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিবে না‌।

একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নিজ গৃহ ব্যতিরেকে অন্য কারো বাড়িতে রাতযাপন করবে না এবং নন মাহরাম ব্যতিরেকে দূরে কোথাও সফরে যাবে না। সর্বোপরি, ফেতনা থেকে দূরে থাকবে এবং তার প্রতি পর পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকবে। কারণ একজন স্বামীহীনা নারী অসৎ চরিত্রের লোকদের কুদৃষ্টিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তৎসঙ্গে সালাতের প্রতি যত্নশীল থাকবে, নফল সালাত, সিয়াম ইত্যাদি অধিক পরিমাণে পালনের চেষ্টা করবে, ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন অব্যাহত রাখবে, যথাসাধ্য বাড়িতে স্থানীয় মহিলাদের তালিমের ব্যবস্থা করবে। প্রয়োজন বোধে ফিতনা মুক্ত ও হালাল পন্থায় নিজের জীবন পরিচালনার জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারে।


মোটকথা, স্বামী-সন্তান এবং পারিবারিক দায়িত্ব ও চাপ মুক্ত অবস্থায় একজন স্বামী পরিত্যাক্তা বা বিধবা নারী ইচ্ছা করলে নিজের জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া ওয়া তায়ালার নৈকট্য অর্জন করে জান্নাতে যাওয়ার পথ তৈরি করে নিতে পারে। এটি তার জন্য বিশাল সুযোগ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url