এক মুসলমান প্রতি আরেক মুসলমানের হক কয়টি - তিনটি আমল আপনাকে নিয়ে যাবে জান্নাতে

এক মুসলমান প্রতি আরেক মুসলমানের হক কয়টি - তিনটি আমল আপনাকে নিয়ে যাবে জান্নাতে, হাদিয়া ও ঘুষ এবং মুনাফা ও সূদের মধ্যে পার্থক্য কি, কাউকে ধন্যবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে থ্যাংক ইউ বা ওয়েলকাম বলায় শারঈ কোন বাধা আছে কি এ সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করব। 

এক মুসলমান প্রতি আরেক মুসলমানের হক কয়টি - তিনটি আমল আপনাকে নিয়ে যাবে জান্নাতে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম তিনি বলেছেন →অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে ডান হাতে আমলনামা নিয়ে জান্নাতে যেতে হলে একনিষ্ঠতার সঙ্গে অল্প আমলের বিকল্প নেই। হাদিসে এমন তিনটি আমলের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, যারা সহজে তিনটি আমল করবে তাদের জান্নাতে যাওয়া একেবারেই সহজ। তাদের জন্য বাধা হয়ে থাকবে শুধুই মৃত্যু।

পোস্ট সূচিপত্রঃ এক মুসলমান প্রতি আরেক মুসলমানের হক কয়টি - তিনটি আমল আপনাকে নিয়ে যাবে জান্নাতে

  • এক মুসলমান প্রতি আরেক মুসলমানের হক কয়টি
  • তিনটি আমল আপনাকে নিয়ে যাবে জান্নাতে
  • হাদিয়া ও ঘুষ এবং মুনাফা ও সূদের মধ্যে পার্থক্য কি
  • কাউকে ধন্যবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে থ্যাংক ইউ বা ওয়েলকাম বলায় শারঈ কোন বাধা আছে কি

এক মুসলমান প্রতি আরেক মুসলমানের হক কয়টি

ইসলাম যে সব হক বা অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো-এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। [সুরা আল হুজুরাত : ১০]

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি মহামূল্যবান নিয়ামত। মহাকবি আল্লামা শেখ সাদি [রহ.] তার কবিতায় গোটা মুসলিম জাতিকে একটি মানব শরীর বলেছেন। আমাদের সবার উচিত যে কোনো মূল্যে অপর মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার আদায় করার মাধ্যমে এই ভ্রাতৃত্ববোধের ফল্গুধারাকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা।

এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের সর্বপ্রথম হক হলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে তাকে ভালোবাসা। হজরত আনাস [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল [সা.] বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে রয়েছে, সে ইমানের স্বাদ অনুভব করবে।

  • তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তাকে সালাম দেবে।
  • সে যখন তোমাকে নিমন্ত্রণ করবে তা রক্ষা করবে।
  • সে যখন তোমার মঙ্গল কামনা করবে, তুমিও তার শুভ কামনা করবে।
  • যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন তুমি ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে।
  • যখন সে অসুস্থ হবে, তুমি তাকে দেখতে যাবে।
  • এবং যখন সে মারা যাবে, তখন তার জানাযায় অংশগ্রহণ করবে।’ (মুসলিম : ৫৭৭৮)

তিনটি আমল আপনাকে নিয়ে যাবে জান্নাতে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট।’ সুতরাং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে ডান হাতে আমলনামা নিয়ে জান্নাতে যেতে হলে একনিষ্ঠতার সঙ্গে অল্প আমলের বিকল্প নেই।

হাদিসে এমন ৩টি আমলের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, যারা সহজ ৩টি আমল করবে তাদের জান্নাতে যাওয়া একেবারেই সহজ। বাধা হয়ে থাকবে শুধু মৃত্যু। তাহলো-

  • আয়াতুল কুরসি প্রতি ফরজ নামাজের পর (১বার)।
  • সূরা মূলক প্রতি রাতে (১বার)।
  • সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার (সকালে ১ বার _সন্ধ্যায় ১বার করে)।

আয়াতুল কুরসি প্রতি ফরজ নামাজের পরঃ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর কুরআনুল কারিমের মর্যাদাপূর্ণ আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করা। এ আয়াতে বান্দা তাওহিদের শ্রেষ্ঠ ঘোষণাগুলো তেলাওয়াত করে।

যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, ওই ব্যক্তি ও জান্নাতের মাঝে এতোটুকু দূরত্ব থাকে যে, সে যেন শুধুমাত্র মৃত্যুবরণ করছেনা বলেই (কবরে) জান্নাতের নেয়ামতগুলো উপভোগ করতে পারছেনা।

সূরা মূলক প্রতি রাতেঃ কুরআনুল কারিমের ২৯তম পারার প্রথম সুরা এটি। এ সুরাটি প্রতিদিন একবার পড়লে মুমিনের জান্নাত সুনিশ্চিত। দৈনন্দিন আমলের সুরাগুলোর মধ্যে এটি একটি। যা প্রতিদিন ইশার নামাজের পর পড়া হয়। এ ছাড়াও যাদের সুরাটি মুখস্থ আছে, তারা চাইলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই এ সুরাটি তেলাওয়াত করতে পারে। নামাজে সুরা মুলক-এর আয়াতগুলো বুঝে বুঝে তেলাওয়াত করলে অন্যরকম আবহ তৈরি হয়। নামাজে একনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফারঃ সাইয়েদুল ইসতেগফার আল্লাহর এত চমৎকার প্রশংসায় ভরপুর যে, যদিকেউ নিজের গোনাহ মাফের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চায়; আল্লাহ ওই ব্যক্তি ক্ষমা করে দেন। রাসূলুল্লাহ (স:) বলেন-

“যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠ করবে দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে”!

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার-

أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো প্রভু নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যমত তোমার কাছে দেয়া ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিগুলো পালনে সচেষ্ট আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপগুলো স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া কেউ ক্ষমাকারী নেই।’

হাদিয়া ও ঘুষ এবং মুনাফা ও সূদের মধ্যে পার্থক্য কি

হাদিয়াঃ ‘হাদিয়া’ হ’ল কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই কাউকে কোন কিছু প্রদান করা। এটি শরী‘আতে বৈধ (বুখারী হা/২৫৭৬)। রাসূল (ছাঃ) ভালোবাসা বৃদ্ধির মাধ্যম হিসাবে পরস্পরকে হাদিয়া দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন (আদাবুল মুফরাদ, ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৪)।

ঘুষঃ আর অন্যায়ভাবে কিছু পাওয়ার আশায় কাউকে কিছু প্রদান করাকে ‘ঘুষ’ বলে। এটি হারাম (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫০৭৬; মিশকাত হা/৩৭৫৩)। ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের লা‘নত (আবুদাউদ হা/৩৫৮০; ইবনু মাজাহ হা/২৩১৩)।

মুনাফাঃ ‘মুনাফা’ হ’ল হালাল ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত লভ্যাংশ। এটি শরী‘আতে বৈধ। কিন্তু অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত মুনাফা অবৈধ বা হারাম (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৯৩৮, সনদ ছহীহ)।

সূদঃ ‘সূদ’ হ’ল একই জাতীয় জিনিসের বিনিময়ে অতিরিক্ত গ্রহণ করা, যা হারাম (বাক্বারাহ ২/২৭৫; মুসলিম হা/১৫৯৮)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক ঋণ যা লাভ নিয়ে আসে, সেটাই সূদ’ (ইরওয়া হা/১৩৯৭)।

কাউকে ধন্যবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে থ্যাংক ইউ বা ওয়েলকাম বলায় শারঈ কোন বাধা আছে কি

কেউ উপকার করলে তার প্রতিদানে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলা সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হ’লে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দিন) তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল (তিরমিযী হা/২০৩৫; মিশকাত হা/৩০২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৬৮)।

ওমর (রাঃ) বলেন, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ বলাতে কি কল্যাণ রয়েছে লোকেরা তা যদি জানত, তাহ’লে তা পরস্পরকে বেশী বেশী বলত (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৭০৫০)। এছাড়া কেউ ‘বারাকাল্লাহু ফীকুম’ বলে দো‘আ করলে তার জওয়াবে অনুরূপ বলবে (নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০১৩৫, সনদ জাইয়িদ)।

এক্ষণে কেউ কৃতজ্ঞতাবোধক বাক্য থ্যাংক ইউ বা ধন্যবাদ বললে তাতে কোন দোষ নেই। তবে সাথে জাযাকাল্লাহু খায়রান যোগ করে নিবে, যা সুন্নাতী আমল হওয়ায় অফুরন্ত ছওয়াবের কারণ হবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url