কোন ব্যক্তির মাঝে মুনাফিকের আলামত দেখা গেলে তাকে মুনাফিক বলে ডাকা যাবে কি

মুনাফিক কাকে বলে, মুনাফিকের আলামত কয়টি, কোন ব্যক্তির মাঝে মুনাফিকের আলামত দেখা গেলে তাকে মুনাফিক বলে ডাকা যাবে কি, কেউ শিরকে রত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার বিচার কিভাবে করবেন আপনি যদি এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। 

কোন ব্যক্তির মাঝে মুনাফিকের আলামত দেখা গেলে তাকে মুনাফিক বলে ডাকা যাবে কি

আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে আপনাদের মাঝে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আপনাদেরকে জানিয়ে দেব। মুনাফিকের আলামত কয়টি তা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। আপনি যদি এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে উপরে বর্ণিত সকল বিষয় সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ কোন ব্যক্তির মাঝে মুনাফিকের আলামত দেখা গেলে তাকে মুনাফিক বলে ডাকা যাবে কি

  • মুনাফিক কাকে বলে
  • মুনাফিকের আলামত কয়টি
  • কোন ব্যক্তির মাঝে মুনাফিকের আলামত দেখা গেলে তাকে মুনাফিক বলে ডাকা যাবে কি
  • কেউ শিরকে রত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার বিচার কিভাবে করবেন

মুনাফিক কাকে বলে

মুনাফিক আরবিতে منافق (মুনাফিক) এর বহুবচন মুনাফিকুন যার অর্থ হয় প্রতারক বা ভন্ড ধার্মিক ব্যক্তি। 

মুনাফিক শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, এককথায় এর উত্তর দেওয়া কখনই সম্ভব নয় তবে যদি কেউ নাছোড়বান্দা হয় তবে বলতে পারে, যার ভিতরে এক বাইরে আরেক তার নাম মুনাফিক। প্রকাশ করে একটা ভিতরে আরেকটা।

মুনাফিকের আলামত কয়টি

মুনাফিকের আলামত তিনটি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান ১৯) সব পয়গম্বরের দ্বীন ছিল এক ও অভিন্ন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন।

যার আদেশ দিয়েছিলেন নুহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহিম, মুসা, ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না (সূরা আশ-শুরা : ১৩)। কিন্তু এ শ্রেষ্ঠ দ্বীনের ক্ষতি সাধনে সদা তৎপর বাতিল সব ধর্মের বিশ্বাসীগণ।

আবার এ ধর্মে বিশ্বাসী কিছু ব্যক্তি নিজ ধর্মের বিরুদ্ধে কথা ও কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল নেই। বাহ্যিকভাবে ইসলামের কথা বললেও অন্তরে রয়েছে কপটতা।

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যথা-

  • যখন কথা বলে মিথ্যা বলে
  • যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে ও
  • আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। (বুখারি- ২৬৮২, মুসলিম- ১/২৫)

কোন ব্যক্তির মাঝে মুনাফিকের আলামত দেখা গেলে তাকে মুনাফিক বলে ডাকা যাবে কি

তাকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট (হুজুরাত ৪৯/১১)। সর্বোচ্চ হয়ত এতটুকু বলা যেতে পারে যে, তার মধ্যে মুনাফিকের একটি আলামত রয়েছে (বুখারী হা/৩৪; মুসলিম হা/৫৮; মিশকাত হা/৫৬)।

ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ) সকালে আমার কাছে আসলেন। তখন এক লোক বলল, মালিক ইবনু দুখশুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে না। তা শুনে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা কি এ কথা বলনি যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্ বলে?

তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যে কোন বান্দা ক্বিয়ামতের দিন ঐ কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন (বুখারী হা/৬৯৩৮; মুসলিম হা/২৬৩)। অতএব অপরকে এমন গালি দেওয়া পরিহার করে নিজের আমল সংশোধনের চেষ্টায় রত হ’তে হবে।" সোর্সঃ মাসিক আত -তাহরীক

কেউ শিরকে রত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার বিচার কিভাবে করবেন

শিরক মহাপাপ, যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না। তবে কোন ব্যক্তি দ্বীনের সঠিক দাওয়াত না পেলে কিংবা অনিচ্ছাকৃত বা অজ্ঞতাবশত শিরকে লিপ্ত অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ চাইলে তাকে মুক্তি দিতে পারেন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩/২৩১; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৩৯; আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৪/৪৪৯)।

কুরআন মাজীদে এসেছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই বা অজ্ঞতাবশে ভুল করি, সেজন্য আমাদের পাকড়াও করো না (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। এই দো‘আর জওয়াবে আল্লাহ বলেন, আমি ক্ষমা করে দিলাম (মুসলিম হা/১২৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন চার ব্যক্তি ঝগড়া করবে।

  1. বধির
  2. নির্বোধ
  3. অতিবৃদ্ধ এবং
  4. যে ইসলামের দাওয়াত পায়নি (من مات في الفترة)।

বধির বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ইসলাম এসেছে, অথচ আমি কিছুই শুনতে পাইনি। নির্বোধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ শিশুরা আমার দিকে পশুর বিষ্ঠা নিক্ষেপ করেছে। অতিবৃদ্ধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ আমি কিছুই বুঝতে সক্ষম হইনি।

আর ইসলামের দাওয়াত না পাওয়া ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তোমার কোন দাওয়াতদাতা আমার নিকট আসেনি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট হ’তে আনুগত্যের শপথ নিবেন। এরপর তাদের নিকট একজন দূত প্রেরণ করবেন এই মর্মে যে, তোমরা আগুনে প্রবেশ কর।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, আগুন তার উপর ঠান্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে না, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮৪১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৩৪)।সোর্সঃ মাসিক আত -তাহরীক


মুনাফিক আমাদের সমাজে বাস করে। কিন্তু আমরা তাদেরকে চিনতে পারিনা, অথবা চিনতে ভুল করি।আপনি যদি এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই জানতে পারবেন যে একটি মুনাফিকের কয়টি আলামত রয়েছে। এর সাথে আপনি দেখতেও পাবেন আপনার আশেপাশে কত মুনাফিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url