জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল ও ফজিলত

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল ও ফজিলত


পোস্ট সূচিপত্রঃ জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল ও ফজিলত  

(১) জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা; বিশেষত আরাফার দিনের রোজা রাখা। [ ২০ জুন ২০২৩ তারিখে  জিলহজ্জ মাস শুরু হবে إِنْ شَاءَ ٱللَّٰهُ‎‎ ]


রাসূল(ﷺ) বলেন– ‘‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা বিগত বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬২]


(২) সামর্থ্যবান হলে কুরবানি করা।


(৩) এই দশ দিন নখ ও চুল না কাটা।


রাসূল(ﷺ) বলেন– ‘‘তোমাদের কেউ জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলে এবং কুরবানি করার ইচ্ছা করলে, সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৭৭]


(৪) চার ধরনের যিকিরে লেগে থাকা।


রাসুল (ﷺ)বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট জিলহজ্জের দশ দিনের আমলের চেয়ে মহান এবং প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং, তোমরা সেই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে 

তাসবিহ ( سُبْحَانَ اللّٰهِ ), 

তাহমিদ ( ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ ), 

তাহলিল ( لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ ) 

ও তাকবির ( اللّٰهُ أَكْبَر ) পড়ো।’’ 

[আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৫৪৪৬; হাদিসটির সনদ সহিহ]


(৫) বেশি বেশি তাকবির তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা।


সাধারণভাবে এই দশ দিন সংক্ষেপে  اللّٰهُ أَكْبَر  বেশি বেশি পড়ুন। সাথে, নিচের বাক্যগুলোও সাধ্যানুসারে পড়ুন।

.

اَللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ أَكْبَرْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ أَكْبَرْ وَلِلّٰهِ الْحَمْد


অর্থঃ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহ ছাড়া কোনও উপাস্য নেই। আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ; আর আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।


এটি ইবনু মাস‘উদ (রা.) ও অন্যান্য পূর্বসূরিদের থেকে প্রমাণিত। [দারা কুতনি, আস-সুনান: ১৭৫৬; আলবানি, ইরওয়াউল গালিল: ৬৫৪ সনদ সহিহ]


তবে, আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজ্জের ৯ তারিখ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একাকী বা জামাতে নামাজ আদায়কারী, নারী অথবা পুরুষ—প্রত্যেকের জন্য একবার তাকবিরে তাশরিক (উপরে বর্ণিত তাকবিরটি) পাঠ করা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চ আওয়াজে বলবে, আর নারীরা নিচু আওয়াজে। [ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমু‘উ ফাতাওয়া: ২৪/২২০; ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মা‘আদ: ২/৩৬০; ইবনু আবিদিন, রাদ্দুল মুহতার: ৩/৬১]


(৬) চারটি সম্মানিত মাসের একটি হলো জিলহজ্জ; তাই এই মাসের সম্মানে যথাসম্ভব সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।


আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সংরক্ষিত ফলকে (বছরে) মাসের সংখ্যা বারোটি—আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তার মধ্যে চারটি (মাস) সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা (গুনাহ করার মাধ্যমে) নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।” [সুরা তাওবাহ, আয়াত: ৩৬]


(৭) এই দিনগুলো বছরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ, তাই অধিক পরিমাণে নেক আমল করা।


রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট জিলহজ্জের (প্রথম) দশ দিনের আমলের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও প্রিয় অন্য কোনো আমল নেই।’’ সাহাবিগণ বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ রাস্তায় জিহাদও কি এর চেয়ে উত্তম নয়?’ তিনি বললেন, ‘‘না। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান ও মাল নিয়ে (জিহাদে) ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং এর কোনো কিছু নিয়েই আর ফিরে এলো না (অর্থাৎ, শহীদ হয়ে গেলো, তার কথা ভিন্ন)।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৯৬৯; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬৫০৫; আবু দাউদ, আস-সুনান: ২৪৩৮]


এই দশদিনের ফরজ ইবাদত অন্যান্য মাসের ফরজ ইবাদতের তুলনায় অধিক মর্যাদার। এই দশদিনের নফল ইবাদত অন্যান্য মাসের নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।[ইবনু রজব, ফাতহুল বারি: ৯/১৫]


★★★আমরা কী কী আমল আমরা করতে পারি?


(এখন যে আমলগুলোর কথা বলা হবে, সেগুলো বছরের যেকোনো সময়ের জন্য। বিশেষভাবে জিলহজ্জ মাসের জন্য নির্ধারিত নয়)


❖ সামর্থ্য থাকলে হজ্জ ও উমরা আদায় করা।


❖ বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা।


❖ আন্তরিকভাবে তাওবাহ করা।


❖ অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা।


❖ সাধ্যানুযায়ী দান-সদাকাহ করা।


❖ কুরআন তিলাওয়াত করা।


❖ সুরা ইখলাস বেশি করে পড়া।


❖  বেশি বেশি দু‘আ করা।


❖ মা-বাবার খেদমত করা।


❖ শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়া।


❖ অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-সুশ্রূষা করা।


❖ মানুষের অভাব ও প্রয়োজন মেটানো।


❖ সকাল-সন্ধ্যা ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করা।


আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইলমে,আমলে বারাকাহ দিক।দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যান দান করুক।আল্লাহ আমাদেরকে প্রিয় বান্দা হিসেবে প্রশান্ত আত্মা নিয়ে তাঁর কাছে ফেরত যাওয়ার তৌফিক দিক।


আল্লাহুম্মা আমীন।




জিল হজ্জ মাসে তাকবীর পাঠের পদ্ধতি 

জিল হজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকেই উঁচু আওয়াজে বেশী বেশী তাকবীর পাঠ করা সুন্নত। ফরজ নামাযের পর, মসজিদে, বাজারে এবং রাস্তায় চলার সময় এ তাকবীর বেশী করে পাঠ করা। মহিলাগণ নিচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করবে। তবে দলবদ্ধভাবে সমস্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নতের পরিপন্থী। কারণ সাহাবীদের থেকে দলবদ্ধভাবে তাকবীর পাঠ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ তারা ছিলেন সৎকাজে আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রগামী। এই তাকবীর দু ধরণের:

🌀 (ক) অনির্দিষ্ট তাকবীর: التكبير المطلق

সময় ও স্থান নির্ধারণ না করে বাড়ী, মসজিদ, রাস্তা ও বাজারে উঁচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করা। জিল হজ্জের প্রথম দিন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত এ তাকবীর চলতে থাকবে। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন, ইবনে উমর ও আবু হুরায়রা (রা:) এই দিন গুলোতে তাকবীর বলতে বলতে বাজারে যেতেন। তাদেরকে তাকবীর বলতে শুনে লোকেরাও তাকবীর পাঠ করত।

🌀 (খ) নির্দিষ্ট তাকবীর: التكبير المقيد  অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাকবীর পাঠ করা:

এই তাকবীর জিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাযের পর থেকে শুরু করে আইয়ামে তাশরীক তথা জিল হজ্জ মাসের ১৩তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকবে।

🔶 তাকবীরের শব্দ:  

اللهُ أكبر اللهُ أكبر لا إلهَ إلَّا الله واللهُ أكبر  اللهُ أكبر ولله الحَمْد 

বাংলা উচ্চারণ: 

আল্লাহু আকবার
আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

ওয়াল্লাহু আকবার
আল্লাহু আকবার
ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url