হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

প্রতিটা প্রাণীর দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হচ্ছে হাড়। হাড় দুর্বল হলে কিংবা ক্ষয় হয়ে গেলে মানব দেহে ভার বহন করা সম্ভব হয় না। হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত,হাড়ের ক্ষতি করছে যে ৪ খাবার, হাড় মজবুত করার খাবার, ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে, কি কি খেলে হাড় জোড়া লাগে নিশ্চয়ই আপনি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। 

হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

কিছু খাবার আছে যেগুলো প্রতিনিয়ত হাড়ের ক্ষয় করে। সেই খাবারগুলো আমরা অজান্তেই প্রতিদিন খাই, এর ফলে আমাদের হাড় দিন দিন ক্ষয় এবং দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়েন, তাহলে আপনি জানতে পারবেন কোন খাবারগুলি ক্ষতি করতেছে। এগুলো থেকে কিভাবে বাঁচা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

প্রতিটা প্রাণীর দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হচ্ছে হাড়। হাড় দুর্বল হলে কিংবা ক্ষয় হয়ে গেলে মানব দেহে ভার বহন করা সম্ভব হয় না। কিছু খাবার আছে যেগুলো প্রতিনিয়ত হাড়ের ক্ষয় করে। সেই খাবারগুলো আমরা অজান্তেই প্রতিদিন খাই, এর ফলে আমাদের হাড় দিন দিন ক্ষয় এবং দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

তবে হাড় ভেঙে গেলে বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেসব খাবার খেলে হাড় তাড়াতাড়ি জোড়া লাগবে এবং হাড় আস্তে আস্তে হয়ে উঠবে শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার পুষ্টিবিদ মারিসা মুরের পরামর্শ মোতাবেক জেনে নিন হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত।

  • সারডিন মাছঃ সারডিন মাছ হাড়ের গঠনে সবচেয়ে কার্যকর ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। ভ্যাল্টক্যাম্পের হিসাব মতে, কিশোরদের দৈনিক ১৩০০ মিলিগ্রাম এবং বয়স্ক নারীদের দৈনিক ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।
  • স্যালমন মাছঃ সব চর্বি কিন্তু খারাপ নয়। চর্বিযুক্ত স্যালমন মাছ তার একটি। এই মাছে আছে ভিটামিন ডি এবং ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড, যা শরীরের কোলাজেন প্রোটিন গঠনে সাহায্য করে। হাড় জোড়া লাগাতে দারুণ কাজ করে এটি।
  • ডিমঃ ডিমে ভিটামিন-ডি আছে খুবই অল্প পরিমাণে। আরও আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন বি। এই খাবারটি শুধু হাড়ের গঠনেই না, সারা শরীরের বিকাশেই কাজ করে।
  • সিমের বিচিঃ যদি আপনি হাড়কে শক্তিশালী করতে চান, প্রতিদিন খেতে পারেন শিমের বিচি। এই খাবারটি ম্যাগনেসিয়ামের দারুণ উৎস। ম্যাগনেসিয়াম হাড় জোড়া লাগাতে পারে দ্রুতগতিতে।
  • আঙুরঃ আঙুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে। সুপারফুড বলে পরিচিত এ ফলটি আপনার হাড়কে করে তোলে শক্তিশালী।
  • পার্সলেঃ ভেষজ এই শাকটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে। হাড় গঠনকারী শাকসবজির মধ্যে পার্সলে থাকবে সবার উপরে। হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এটি। 

হাড় ভেঙে গেলে আপনি এই খাবারগুলো খেতে পারেন। এই খাবারগুলি আপনার হাড় কে অনেক মজবুত এবং শক্তিশালী বানাবে। সেই সাথে ভাঙ্গা হাড়কে দ্রুত জোড়া লাগাতেও সাহায্য করবে। সুতরাং হাড়ের ক্ষয় কিংবা ভেঙ্গে গেলে এই খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

হাড়ের ক্ষতি করছে যে ৪ খাবার

চিকিৎসাশাস্ত্রে হাড় ক্ষয় রোগ কি বলতে বোঝায় হাড়ের পুরুত্ব কমে যাওয়াকে। অর্থাৎ মাতৃগর্ভ থেকে আমরা যে হাড় নিয়ে জন্মগ্রহণ করি, তা নির্দিষ্ট সময় পর পাতলা দুর্বল হয়ে পড়লে সেই অবস্থাকে বলা হয় হাড়ের ক্ষয় বা অস্টিওপোরেসিস। চলুন জেনে নেই কোন কোন খাবার হাড়ের ক্ষয়ের জন্য বিশেষভাবে দায়ী -

  • অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল গুলো চুষে নেয়। মিনারেল ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড় ক্ষয় বেড়ে যায়।
  • অতিরিক্ত লবণঃ অতিরিক্ত লবণ হাড়ের ক্যালসিয়াম চুষে নেয় এবং দেহের হারকে দুর্বল করে ফেলে। চিকিৎসকদের মতে, ২৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করলে শরীর থেকে ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম হারাতে হয়।
  • ক্যাফেইনঃ হাড়ের জন্য ক্ষতিকর আরেকটি খাবার হলো ক্যাফেইন। আমরা প্রতিনিয়ত চা অথবা কফি খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা বুঝতেই পারি না এটা দিনে দিনে আমাদের হাড়ের ক্ষয় করতেছে। এজন্য অতিরিক্ত চা অথবা কফি খাওয়া ঠিক না।
  • অ্যালকোহলঃ কোন উৎসব অনুষ্ঠান হলে আমরা কমল পানীয় পান করি। আবার একটু গরম লাগলেও আমরা এই কোমল পানিও পান করি। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই কোমল পানি আপনার হাড়ের কতটা ক্ষতি করে। এটি আপনার হাড়ের উপকারী উপাদান গুলো নষ্ট করে ফেলে এবং নতুন হাড় গঠন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়।

হাড় মজবুত করার খাবার

চিকিৎসকেরা বলেন, হাড় মজবুত থাকলে শরীরকেও বিভিন্ন অসুখের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর থেকে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। শুধু বয়স জনিত কারণে নয় অনিয়মিত খাবারের ফলে হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়।

ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য একটি অপরিহার্য ভিটামিন। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতিদিন ৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। দুধ, পনির, শাক-সবজি, সয়াবিন মাছ ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। চলুন জেনে নেই কোন খাবার খেলে হাড় মজবুত হয়-

  • দুধঃ উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে দুধ একটি। এক কাপ দুধে অর্থাৎ ১০০০ মিলিগ্রাম দুধে ২৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
  • বাদামঃ বাদামে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। আপনি চাইলে প্রতিদিন সকালে এক মুঠো করে বাদাম খেতে পারেন।
  • কমলার রসঃ কমলাতে রয়েছে ভিটামিন-ডি এবং ক্যালসিয়াম, যা হারকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন ডিঃ খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণের ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না। কিন্তু আমরা সূর্য থেকে ভিটামিন ডি পাই এই জন্য প্রতিদিন সকালে সূর্যের আলোতে হাঁটা-চলাফেরা করা আমাদের হাড়ের জন্য খুবই উপকারী।
  • কলাঃ কলাতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম দাঁতের গঠন এবং হাড়ের জন্য একটি অপরিহার্য ভিটামিন।
  • পালং শাকঃ সবুজ শাক-সবজি সব সময় শরীরের জন্য উপকারী। এর মধ্যে পালং শাক হাড়ের জন্য খুবই উপকারী। পালং শাকের মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড় বৃদ্ধি করে।
  • মুরগির মাংসঃ মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে, যা হাড় মজবুত করার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন ঘাটতিপূর্ণ করে।
  • ডুমুরঃ ডুমুরের প্রতি এক কাপে ২৪২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এই ফলকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এর ভিতর থাকা ম্যাগনেসিয়াম, হৃদস্পন্দন স্থির রাখতে এবং পেশির কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • দইঃ দইয়ের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম। দুয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা আমাদের অন্তরের জন্য খুবই উপকারী।

ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে

ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগবে, তা নির্ভর করে আপনার কোন ধরনের হাড় ভাঙ্গা রয়েছে তার ওপর। যেমন বেশির ভাগ বোন ফ্র্যাকচার ৭-৮ সপ্তাহের মধ্যে জোড়া লাগে যায়। একটি টিবিয়া ফ্র্যাকচার ২০ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় লাগে ঠিক হতে। ভাঙাহার জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে তা তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়, চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেই -

  • প্রদাহজনক পর্যায়ঃ আঘাতের সময় শুরু হয় এবং এক থেকে দুই সপ্তাহ স্থায়ী হয়। টিস্যু গুলোর ক্ষতির ফলে কোষ গুলো মরে যায় যা একটি প্রদাহ জনক প্রতিক্রিয়া দ্বারা পরিষ্কার করা হয়। রক্ত জমাট বাধা একটি প্রোটিন জালে সংগঠিত হয় যেখানে হাড় বুনা শুরু হয়।
  • মেরামত পর্যায়ঃ পরবর্তী দুই থেকে তিন সপ্তাহ স্থায়ী যেখানে প্রকৃত টিস্যু মেরামত হয় এবং হাড়, তরুণ গ্রন্থী এবং ফাইবার রস টিস্যুর নতুন জীবন্ত কোষ ফ্যাকচার সাইডে দেখা যায়। আঘাতের দুই বা তিন সপ্তাহ পরে ক্যালসিয়াম কলাতে জমা হয় যা এক্সরে তে দেখা যায়।
  • রিমডেলিংঃ ফ্র্যাকচার কলাসে শক্তিশালী সংঘটিত হাড় দিয়ে প্রতিস্থাপিত হওয়ার কারণে ঘটে। ফ্যাকচারে আর ব্যথা থাকে না এবং এক্সরে তে ঠিক হচ্ছে বলে মনে হওয়ার পরে, কয়েক মাস ধরে রিমডেলিং করা হয়।

কি কি খেলে হাড় জোড়া লাগে

দুর্ঘটনায় অনেকেরই হাড় ভেঙে যায়। বর্তমানে বাইক এক্সিডেন্ট করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাড় ভেঙে যায়। এর মত যন্ত্রণাদায়ক কষ্টকর ব্যাপার আর কি হতে পারে। তবে বেশ কিছু খাবার আছে যে খাবারগুলো খেলে দ্রুত এই ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগবে।

হাড় দ্রুত জোড়া লাগানোর জন্য আপনাকে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-সি, আয়রন, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বেশি প্রয়োজন। ওষুধ থেকে নয়, খাবার থেকে এই পুষ্টি গুলো পাওয়া বেশি প্রয়োজন। চলুন তাহলে জেনে নিয়ে এই ভিটামিন গুলো আমরা কোন কোন খাবার থেকে পেতে পারি।

  • ডিমঃ ডিমে ভিটামিন-ডি আছে অল্প পরিমাণে। আর ডিমে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন-বি অধিক পরিমাণে। এই খাবারটি শুধু হাড়ের গঠনেই না, সারা শরীরের বিকাশের জন্য খুবই প্রয়োজন।
  • সারডিন মাছঃ এই মাসের মধ্যে রয়েছে ভরপুর ক্যালসিয়াম। যা হাড়ের গঠনে অধিক কার্যকর। কিশোরীদের দৈনিক ১৩০০ মিলিগ্রাম এবং বয়স্ক নারীদের দৈনিক ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।
  • স্যালমন মাছঃ এই মাছে আসে ভিটামিন-ডি এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, যার শরীরের কোলাজেন প্রোটিন গঠনে সাহায্য করে। হাড় জোড়া লাগাতে দারুন কাজ করে।
  • সিমের বিচিঃ এর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা আপনার হাড়কে শক্তিশালী করে তুলবে। আপনি যদি আপনার হাড়কে শক্তিশালী করতে চান তাহলে প্রতিদিন সিমের বিচি খান।
  • আঙ্গুরঃ আঙ্গুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে। এই ফল হাড় কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  • পালংঃ এর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। যা হাড়কে মজবুত এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন, তাহলে আপনি আপনার ভাঙ্গা হাড় দ্রুত জোড়া লাগাতে পারবেন, আমাদের দেওয়ায় নিয়ম গুলো ফলো করে। আপনি আরো জানতে পারবেন কোন কোন খাবার হাড়ের ক্ষয় করতেছে অর্থাৎ কোন কোন খাবার হারের জন্য ক্ষতিকর। আপনি এটাও জানতে পারবেন কোন খাবার হাড়ের জন্য উপকারী। আশা করি এই পোস্টটি আপনার জন্য উপকারী হবে। এগুলো সব কিছু ভালোভাবে জানতে হলে আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url