রক্ত দেওয়ার উপকারিতা - রক্ত শূন্যতার লক্ষণ

নিজের শরীরের রক্ত অন্যকে স্বেচ্ছায় দান করার নাম হলো রক্তদান। আমরা অনেকেই রক্ত দান করতে চাই কিন্তু সামান্য কিছু ভুল বোঝার কারণে বা না জানার কারণে দিতে ভয় করি। সেজন্যই আজকে আমি রক্ত দেওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদেরকে জানিয়ে দেবো। রক্ত দেওয়া যায় শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর না তা আপনি পোস্ট পড়লেই জানতে পারবেন।

রক্ত দেওয়ার উপকারিতা - রক্ত শূন্যতার লক্ষণ

এছাড়াও বর্তমান সময়ে রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জন্য রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও রক্তশূন্যতার প্রতিকার সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন। আমি এই বিষয়গুলো সম্পর্কেও নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সব বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

রক্ত দেওয়ার উপকারিতা

নিজের শরীরের রক্ত অন্যকে দান করে তার জীবনকে সচল করা একটি মহৎ গুণ। অন্যকে রক্ত দান করতে হলে যে সাহস বা আত্মবিশ্বাস নিজের প্রতি থাকা দরকার তা সবার মধ্যে থাকে না। রক্ত দান করা যেমন একটি মহৎ গুণ, ঠিক তেমনি ভাবে সায়েন্টিকেলি প্রমাণিত যে রক্ত দেওয়ার উপকারিতা অনেক।

কখনো কি ভেবে দেখেছেন আপনার দেওয়া রক্তে বা দান করা রক্তে একজন মানুষের জীবন রক্ষা পেতে পারে। অনেকেই রয়েছেন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত থাকার পরেও রক্ত দান করতে চান না। আবার অনেকে রয়েছে যারা শুধু রক্ত দান করে নিজে আনন্দিত হয়। অন্যকে রক্ত দান করার ফলে নিজের মনের ভিতর একটা অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করা যায়। যে প্রশান্তি তা হয়তো অন্য কোন কাজ করে পাওয়া যাবে না।

অনেকেই মনে করেন রক্তদান করার ফলে শরীর খারাপ হয়ে যায়, শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দেয় বা নানা রকম অসুখের উপদ্রব শরীরে দেখা দেয়। আপনার জানা উচিত এটা নিতান্তই ভুল ধারণা। রক্ত দেওয়ার ফলে শরীর খারাপ হয় না বরং শরীরের উপকারিতা হয়। চলুন জেনে নেই রক্ত দেওয়ার উপকারিতা কি-

  • আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
  • আপনি যদি বছরে তিনবার রক্তদান করেন তাহলে আপনার শরীরের লোহিত রক্ত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বৃদ্ধি পায় সাথে নতুন কণিকা তৈরি হওয়ার হার ও বৃদ্ধি পায়।
  • রক্তদান করার পরে রক্তশূন্যতার কোন ভয় পাওয়ার দরকার নেই, কেননা রক্ত দান করার পর মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন রক্ত উৎপন্ন হয়ে দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
  • চিকিৎসকরা অনেক গবেষণা করার পর দেখেছেন যারা বছরে দুইবার রক্ত দেয়, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
  • আরো একটি বিষয় আপনি জানলে অবাক হবেন, রক্ত দেওয়ার ফলে বা দান করলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়।
  • নিয়মিত রক্তদানের ফলে বিনা পয়সায় আপনি জানতে পারবেন আপনার শরীরে কোন বড় ধরনের রোগ রয়েছে কিনা।
  • একটি আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
  • বিশেষ এক ধরনের রক্তদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীর প্লাটিলেট সংগ্রহের সময় প্লাটিলেট কাউন্টও জানা যায়।
  • এছাড়াও নিয়মিত রক্তদান রক্তের কোলেস্টেরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে।

রক্তের বিভিন্ন রোগ যেমন থ্যালাসেমিয়া, অপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের প্রতিনিয়ত রক্তের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া নারীদের সন্তান প্রসবের সময়, বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রক্তের প্রয়োজন হয়। আপনার দান করা এক ব্যাগ রক্তের মাধ্যমে এ মানুষগুলোর যে কার হবে তা অমূল্য। তাদেরকে রক্ত দেওয়ার ফলে আপনার মনে যে প্রশান্তি আসবে, সেটা রক্ত না দিলে কখনো অনুভব করতে পারবেন না। সুতরাং স্বেচ্ছায় রক্ত দান করুন এবং অন্যের জীবনকে বাঁচিয়ে তুলুন।

রক্ত শূন্যতার লক্ষণ

আমরা জানি রক্তের প্রধান দুটি উপাদান হলো রক্তকোষ ও রক্তরস। রক্তস্বল্পতায় এমন এক ধরনের রোগ যেখানে রক্তে থাকা স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্ত কণিকার অপর্যাপ্ত পরিমাণের কারণে, শরীরে কলায় অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এই রোগ রক্তের পর্যাপ্ত অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং রক্তস্বল্পতার একাধিক উপসর্গ সৃষ্টি করে এর ফলে আক্রান্ত ও ব্যক্তির শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত বোধ করে।

মানুষ নানা কারণে রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন। আপনিও রক্তশূন্যতায় ভুগছেন কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হলে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে রক্ত শূন্যতার লক্ষণ সম্পর্কে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নিই রক্তশূন্যতার লক্ষণ গুলো-

  • যদি আপনার হাত পায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠান্ডা হয়ে থাকে তাহলে সেটি রক্তশূন্যতার কারন। তাই এই লক্ষণ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি সময় মত চিকিৎসা না করা হয় তাহলে মারাত্মক-বিপদে পড়তে পারেন।
  • রক্তের হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন গ্রহণ করে। ফলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। তখন রোগী সকল কাজে হাঁপিয়ে বা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এটিও একটি রক্তশূন্যতার লক্ষণ।
  • যদি শরীরের আয়রন কমে যায় তাহলেই রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এর প্রভাবে প্রচুর চুল পড়ে যায়। , কাজেই অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যাও রক্তস্বল্পতার লক্ষণ হতে পারে।
  • রক্তশূন্যতা বুঝার আরেকটি বিশেষ দিক হলো ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এরকমটা হলে অনেকে মনে করেন যে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে বিষয়টা এরকম না রক্তশূন্যতার কারণে আপনার ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
  • এছাড়াও রক্তশূন্যতার কারণে চোখের ভেতরের মাংস পেশিগুলো লাল রঙ হারিয়ে ফেলে।
  • রক্তশূন্যতায় ভোগা ব্যক্তি অল্পতেই ক্লান্তী ও বিষণ্ণতায় ভোগেন। যার ফলে প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয় এবং সেই সঙ্গে রোগী মানসিক অবসাদের শিকার হতে পারেন।

রক্ত শূন্যতার প্রতিকার

বর্তমানে দিন দিন রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন কথা হচ্ছে যে রক্তশূন্যতার প্রতিকার কিভাবে করা যায় বা এটা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। এটা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনার রক্তশূন্যতার মাত্রা কি পরিমাণে রয়েছে সেটা সম্পর্কে।

আপনার রক্ত শূন্যতার তীব্রতা সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। উপরে বর্ণনা করা রক্তশূন্যতার লক্ষণগুলোর মধ্যে কোন লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এছাড়াও আপনি ঘরোয়া উপায়ে কিছু খাবার খেয়ে অর্থাৎ খাবারের তালিকা ঠিক রেখে এবং কিছু নিয়ম অনুসরণ করে রক্তস্বল্পতা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। চলুন তাহলে সেই সম্পর্কে জেনে নেই-

  • পিনাট বাটার চিনাবাদামঃ আয়রনের একটি অন্যতম উৎস হলো পিনাট বাটার। দুই চামচ পিনাট বাটারে ০.৬ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। আপনার যদি পিনাট বাটার খেতে ভালো না লাগে তাহলে আপনি চিনাবাদাম খেতে পারেন।
  • টমেটোঃ টমেটোতে ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা অন্য খাবার থেকে আয়রন সংগ্রহ করতে সাহায্য করে।এছাড়া টমেটোতে বিটা ক্যারটিন, ফাইবার, এবং ভিটামিন ই আছে।
  • পালং শাকঃ পালং শাকে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ই, সি, বিটা কারটিন এবং আইরন রয়েছে। যা রক্ত তৈরি করে থাকে। আধাকাপ সিদ্ধ পালংশাকে ৩.২ মিলিগ্রাম আয়রন আছে যা মহিলাদের দেহে ২০% আয়রন পূরণ করে থাকে।
  • বিটঃ বিট আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হওয়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি রক্ত স্বল্পতা দূর করে দেয়। এটি লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে এবং দেহে অক্সিজেন সরবারহ সচল রাখে।
  • ডালিমঃ ডালিম এ প্রচুর পরিমাণ আয়রন এবং ভিটামিন সি রয়েছে। এটি দেহে রক্ত প্রবাহ সচল রেখে দুর্বলতা ও ক্লান্ত ভাব দূর করতে পারে। নিয়মিত ডালিম খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও আপনি প্রতিদিনের নাস্তায় এক গ্লাস ডালিমের রস খেতে পারেন।
  • আয়রন ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতার চিকিৎসায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ফেরাস সালফেটের প্রচলিত দৈনিক ডোজ হচ্ছে ৩০০-৩২৫গ্রাম।
  • এছাড়াও লালশাক, কচুশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, শিম ও শিমের বিচি, কাঁচা কলা, সামুদ্রিক মাছ, গিলা কলিজা , গরু-খাসির মাংসে প্রচুর আয়রন থাকে। এগুলো রক্ত স্বল্পতা দূর করতে বিশেষভাবে কাজ করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url