ইসলামিক হাদিসের কথা - কুরআন ও হাদিসের কথা

সকলেই তাদের নিজের ধর্ম নিয়ে খুবই আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু সকল ধর্মের ওপরে রয়েছে ইসলাম ধর্ম।ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। আর ইসলাম ধর্ম মানেই শান্তির ধর্ম। আজকে আমি কিছু ইসলামিক হাদিসের কথা আপনাদেরকে জানাবো যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং আমাদের নিত্যদিনের কাজের মধ্যে এগুলো পড়ে থাকে। আমরা নিজেদের অজান্তেই ভুল করি। ভুলগুলো শুধরে সঠিকটা জানার জন্য আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

ইসলামিক হাদিসের কথা - কুরআন ও হাদিসের কথা


শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, অঙ্গহানি ইত্যাদি পরীক্ষা না কি শাস্তি?

পবিত্র কুরআনে সুরা তোয়া-হা এর ১২৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, "যে আমার উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে তার সংকীর্ণ জীবন হবে এবং পরকালে তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠাবো।"

আমার এক দীনি বোন আছেন, যিনি এক দুর্ঘটনায় তার এক পা হারান। এখন এই বোন জানতে চাচ্ছেন যে, তার জীবন তো এখন সংকীর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও সহজে চাইলেই যেতে পারেন না আগে যেটা পারতেন। ঘরের মধ্যে চলাচলেও কষ্ট। তবে এটা কি তার শাস্তি না কি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা? 

আল্লাহ তাআলাা বলেন,

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ

“এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” [সূরা ত্বা-হা: ১২৪]

‘সংকীর্ণ জীবন’ বলতে কী উদ্দেশ্য?

“জীবন সংকীর্ণ হবে” অর্থ সে মানসিকভাবে অশান্তিতে থাকবে। গোমরাহির কারণে তার অন্তরটা সংকীর্ণ ও সংকুচিত থাকবে। যদিও সে ইচ্ছামত খাওয়া-দাওয়া করবে এবং পোশাক পরিধান করবে কিন্তু সবসময় সে অস্থিরতা, দু:শ্চিন্তা, সংশয়, সন্দেহের মধ্যে ঘুরপাক খাব। সর্বদা তার হৃদয়ে দোদুল্যমনতা কাজ করবে। সে মোটেও সুখময় জীবনের অধিকারী হবে না।

যাহহাক রহ. বলেন, সংকীর্ণ জীবন অর্থ: খারাপ কাজ এবং নিকৃষ্ট খাবার। আরেকটি অর্থ হল, মৃত্যু বরণের পরে তার কবর তার জন্য সংকুচিত হয়ে তাকে এমনভাবে চেপে ধরবে যে, তার শরীরের হাড্ডিগুলো এপার-ওপার হয়ে যাবে।” (আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে মাউকুফ সূত্রে বর্ণিত) [তাফসীরে ইবনে কাসীর]

তাহলে এই আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, সংকীর্ণ জীবন দ্বারা শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি, অঙ্গহানি ইত্যাদি উদ্দেশ্য নয়। বরং তা মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা, অথবা কবরের সংকীর্ণতা ইত্যাদি উদ্দেশ্য।প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ হুইল চেয়ারে বসেও মানসিকভাবে অত্যন্ত সুখী জীবনের অধিকারী হতে পারে। যদি তার ভেতর আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি থাকে।

শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি, অঙ্গহানি বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বান্দার গুনাহ মোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ কি

আল্লাহ তাআলা বান্দার শারীরিক ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি, অসুখ-বিসুখ ইত্যাদির মাধ্যমে তার গুনাহ মোচন করেন এবং তার দরবারে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ ولا وَصَبٍ ولا هَمٍّ ولا حَزَنٍ ولا أذًى ولا غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا إلا كفَّرَ اللهُ بها من خَطَايَاهُ

“মুসলিম ব্যক্তি কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা এমনকি কোন কাঁটা বিঁধলেও (যদি সে ছবর করে ও আল্লাহর উপরে খুশী থাকে), তাহলে তার কারণে আল্লাহ তার গুনাহ সমূহ মাফ করে দেন।” [বুখারী ও মুসলিম]

অন্য হাদিসে তিনি বলেন,

مَن يُّرِدِ اللهُ به خَيْرًا يُصِبْ منه

‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তাকে বিপদে ফেলেন’। [বুখারী, রিয়াযুস সালেহীন হা/৩৯]।

অন্য হাদিসে তিনি বলেন,

لا يزال البلاء بالمؤمن أو المؤمنة فى نفسه و ماله و ولده حةى يلقىَ الله ةعالى وما عليه من خطيئة

“মুমিন পুরুষ বা নারীর জীবন, সন্তান ও মালের উপর বিপদাপদ আসতেই থাকে। অবশেষে আল্লাহর সাথে সে সাক্ষাৎ করে এমন অবস্থায় যে, তার কোন পাপ থাকে না।” [সুনান তিরমিযী, মুওয়াত্তা মালিক, মিশকাত হা/১৫৬৭।] অর্থাৎ ব্যক্তিগত বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের ফলে মুমিন বান্দা পাপ মুক্ত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যান এবং আল্লাহর কাছে মহা পুরষ্কার লাভে ধন্য হন।

সুতরাং উক্ত বোন যদি সবর করেন এবং আল্লাহর তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে আল্লাহ তাআলা আখিরাতে তার এই বিপদের বিনিময় দান করবেন ইনশাআল্লাহ। তার গুনাহ মোচন করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। হয়ত আল্লাহ এভাবে তাকে পরীক্ষা নিতে চান এবং পরিশুদ্ধ মানুষে পরিণত করে পর কালীন সাফল্য নিশ্চিত করতে চান।

তাই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে প্রয়োজন আল্লাহর আনুগত্যে জীবন অতিবাহিত করার পাশাপাশি এই দুর্ঘটনাকে আল্লাহর তাকদিরের ফয়সালা হিসেবে মনেপ্রাণে গ্রহণ করা এবং তার উপর সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

অনেক সময় দেখা যায় যে, পেশাব করে পানি নেওয়ার সময় কাপড় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন কী করণীয়?

পেশাব-পায়খানার পর খুব সতর্কতার সাথে ভালোভাবে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে। তবে সতর্ক থাকার পরও যদি নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেন যে, কাপড়ে পেশাব অথবা পেশাব ধোয়া পানি লেগেছে তাহলে যে স্থানে লেগেছে সে স্থানটা পবিত্র পানি দ্বারা ভালো করে ধৌত করে নিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে।

কিন্তু বেশি পরিমাণে নাপাকি কাপড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়ার কারণে বা নাপাকি লাগার নির্দিষ্ট স্থান সনাক্ত করতে না পারার কারণে যদি কাপড় ধৌত করা সম্ভব না হয় তাহলে তা পরিবর্তন করা জরুরি। অন্যথায় ঐ নাপাক কাপড় পরে সালাত শুদ্ধ হবে না। কেননা শরীর, পরিধেয় বস্ত্র এবং সালাতের স্থান পবিত্র হওয়া সালাতের পূর্বশর্ত। অন্যথায় সালাত আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে না।

হাদিসে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ "‏ لاَ يَقْبَلُ اللَّهُ صَلاَةً بِغَيْرِ طُهُورٍ

আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল করেন না।” (সহিহ ইবনে মাজাহ হা/২২৩)

ফকীরকে ভিক্ষা দেয়ার পর বলবেন না "আমার জন্য দু'আ করো" বলা যাবে কি না?

মহান আল্লাহ বলেন,

وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا , إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا

‍"তারা আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।" (সুরা দাহার: ৮-৯)।

ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ্ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

যে ব্যক্তি ফকীরকে সাহায্য করার পর তার কাছে দু'আ বা কৃতজ্ঞতা চাইবে সে এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এই কারণে যে, দুয়া সবচেয়ে বড় প্রতিদান ও উচ্চ পর্যায়ের কৃতজ্ঞতা। দানকারী যখন এগুলো চাইবে, তখন সে যেন তার দানের বিনিময় চাইল।

মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে নিয়মিতভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে কি

মৃত ব্যক্তির জন্য কবরের পাশে নিয়মিত বা অনিয়মিত কোনভাবেই কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃতকে...’ (নমল ২৭/৮০)। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এরূপ কোন আমলের প্রমাণ পাওয়া যায় না।

ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘মৃত্যুর পর লাশের নিকট কুরআন তেলাওয়াত করা বিদ‘আত’ (আল-ইখতিয়ারাত ১/৪৪৭, ৯১)। একইভাবে ইমাম শাফেঈ, হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) প্রমুখ বিদ্বানগণ একে বিদ‘আত বলেছেন (যাদুল মা‘আদ ১/৫৮৩ পৃ.; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৩৯)।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url