মাসিকের ব্যাথা কমানোর উপায় - মাসিকের ব্যাথা কমানোর দোয়া

প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য মাসিক বা পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিটি নারীকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এই সময়টাতে আমাদের সব থেকে যে সমস্যাটা বেশি ফেস করতে হয় সেটি হলো অসহনীয় ব্যথা। তাই আজকে আমরা জানবো মাসিকের ব্যাথা কমানোর উপায় বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়।

মাসিকের ব্যাথা কমানোর উপায় - মাসিকের ব্যাথা কমানোর দোয়া

এছাড়াও আমরা আরো জানবো মাসিকের ব্যাথা কমানোর দোয়া, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার, পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ সকল বিষয়ে আজকের এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করব। পিরিয়ডের সকল বিষয়ে সম্পর্কে জানতে আজকের এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

পোস্ট সূচীপত্র

মাসিকের ব্যাথা কমানোর উপায়

প্রতিটি নারীর জন্য মাসিক একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। প্রতিমাসে মাসিক নারীদের গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। এই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোন মেয়ে মা হতে পারে না। এই জন্য প্রতিটি নারীকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

মাসিকের সময়টাতে প্রতিটি নারীর মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, কোমর ব্যথা, হাত জ্বালাপোড়া করা, মেজাজ খারাপ, বমি বমি ভাব সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তবে বেশিরভাগ নারীর মাসিক বা পিরিয়ডের সময় পেটে অত্যন্ত ব্যথা হয়। এ ব্যথা অনেকের সহনীয় হয় আবার অনেকের অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়।

যখন পেটের ব্যাথা ও সহনীয় পর্যায়ে চলে যায় তখন আর চুপ করে বসে থাকা যায় না। কিন্তু আপনি যদি মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া মাধ্যম জানেন তাহলে এই অসহনীয় ব্যাথা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারেন। আজকে আমি আপনাদেরকে সেই সব ঘরোয়া উপায়গুলো বলে দেবো, যে উপায়গুলো আপনি অবলম্বন করে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কিছুটা হলেও কম করতে পারবেন।

  • হিটিং প্যাড ব্যবহার করবেনঃ মাসিক বা পিরিয়ডের সময় হিটিং প্যাড ব্যবহার করলে মাসিকের ব্যথা থেকে অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যায়। মাসিক বা পিরিয়ডের সময় পিঠের ব্যথা কমানোর জন্য পিঠের নিচের অংশের দিকে হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।
  • গরম সেঁক নিবেনঃ গবেষণায় দেখা যায় পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য যে ওষুধগুলো রয়েছে তার থেকেও তুলনামূলক বেশি কাজ করে গরম সেঁক নিলে। শক্ত পলিব্যাগে গরম পানি নিয়ে গামছা অথবা কাপড় দিয়ে গরম পানির পলিব্যাগ টা মুড়িয়ে নিয়ে পেটের উপর ধরে রাখবেন। এটি যেহেতু অনেক সহজ একটি প্রক্রিয়া।এজন্য আপনি এটি বাড়িতে যে কোনভাবে নিতে পারেন। এতে করে আপনার ব্যথা অনেকটা সহনীয় হয়ে যাবে।
  • অ্যালোভেরার রস খাবেনঃ অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটি জুস বানিয়ে নিবেন। মাসিক বা পিরিয়ডের সময় এই জুস দিনে দুই থেকে তিনবার পান করবেন। এটি আপনার ব্যথা অনেকটা কমিয়ে দিবে।
  • পেঁপে খাবেনঃ মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা দূর করার জন্য পেঁপে বেশ কার্যকারী। মাসিকের সময় নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খাবেন। কাঁচা পেঁপে পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে দিতে সহায়তা করে।
  • আদার রসঃ পেটের ব্যথা কমাতে আদা রসের তুলনা নেই। আপনি যদি পিরিয়ডের সময় আদা চা পান করেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন। এছাড়াও আপনি আধা টুকরো করে কেটে নিয়ে মধু ও চিনির সঙ্গে গরম পানি মেশে পান করতে পারেন। এতে করে আপনার ব্যথাটা অনেকটাই কমে যাবে।
  • গোসলঃ ব্যথা কমানোর জন্য কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এতে মাসিকের ব্যথা কমবে শরীরও আরাম লাগবে।

উপরে বর্ণনা করা এই উপায়গুলো অবলম্বন করে আপনি ঘরে বসেই মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কিছুটা হলেও কম করতে পারবেন। গরম পানির সেক সবচেয়ে বেশি কার্যকারী। আপনি অবশ্যই এই উপায়টি অবলম্বন করবেন। এটি অনেক সহজ একটি উপায় এবং এটি সকলেই করতে পারবে।

মাসিকের ব্যাথা কমানোর দোয়া

প্রাকৃতিকভাবে মাসিক মেয়েদের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বর্তমান বিশ্বের চিকিৎসায় এতই উন্নত যে এখন মানুষ দোয়া দরুদ পাঠ করতেই চায়না। কিন্তু দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পানাহার চাইলে যে আল্লাহ তা'আলা সেই ব্যথা সহনীয় করে দেয় তা মানুষকে এখন বিশ্বাস করানোই দায়।

এরপরে অনেকে রয়েছে আমরা যারা দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পানাহার চেয়ে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চাই। আমরা অনেকেই মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য দোয়া খোঁজি। কিন্তু আমরা সঠিক দোয়া কোনটি সেটি জানিনা। আজকে আমরা জানবো মাসিকের ব্যাথা কমানোর দোয়া বা ব্যথা সহনীয় করার দোয়া।

মাসিকের ব্যাথা কমানোর দোয়া

বাংলা উচ্চারণঃ আউজু বি-ইজ্জাতিল্লহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।

অর্থঃ আল্লাহর নামে আমি আল্লাহর অসীম সম্মান ও তাঁর বিশাল ক্ষমতার অসিলায় আমার অনুভূত এই ব্যথার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।

দোয়ার উপকারিতাঃ উসমান বিন আবুল আস আসসাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে মারাত্মক ব্যথা নিয়ে উপস্থিত হলাম, যা আমাকে প্রায় অকেজো করেছিল। রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, তুমি তোমার ডান হাত ব্যথার স্থানে রেখে সাতবার এই দোয়াটি পাঠ করো।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার

মাসের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের মাসিকের বা পিরিয়ডের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। তখন সকলেরই প্রায় অসহনীয় ব্যাথা হয়। এই ব্যথা কমানোর জন্য অনেকেই অনেক রকমের খাবার বা অনেক রকমের উপায় অবলম্বন করেন।

আর আপনারা তো ইতিমধ্যে উপরে জেনে গেছেন যে কোন উপায় অবলম্বন করে মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানো যায়। তাহলে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক মাসিকের বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য কোন কোন খাবার খাওয়া দরকার বা আপনি কোন কোন খাবারগুলো খাবেন।

  • কলাঃ এই ফল সারা বছরই পাওয়া যায়। কলাতে ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম থাকে, এই দুটো উপাদানই মাসিক বা পিরিয়ডের সময় হওয়া যন্ত্রণা এবং পেটের ফোলা ভাব কমায়তে সহায়তা করে। এই জন্য পিরিয়ডের সময় যদি আপনার পেটে ব্যথা হয় তাহলে আপনি কলা খেতে পারেন।
  • লেবুঃ লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি। এটি খাবার থেকে আয়রন শোষণ করার কাজে সহায়তা করে।এছাড়াও লেবুতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, যা পেশির খিচুনি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • বেশি বেশি পানি পান করবেনঃ পিরিয়ডের সময়ে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি পানি পান করুন। এতে পেটের ব্যথা অনেকটাই কম অনুভূত হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পানের কারণে পেটের ফোলাভাব এবং গ্যাস থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
  • সবুজ শাকসবজিঃ পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে অনেকটা রক্ত বের হয়ে যায়। সেই ক্ষতি পূরণের জন্য খাবারের তালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। তাই এসময় প্রচুর সবুজ শাক-সবজি খাবেন। এতে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে, যা পিরিয়ড চলাকালীন পেটে ব্যথা কমাতে কাজ করে।
  • তরমুজঃ তরমুজে রয়েছে লাইকোপেন নামক একটি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা প্রদাহনাশ করতে সাহায্য করে। শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে পিরিয়ডের সময়ে তরমুজ খেতে পারেন।
  • আদার রসঃ পেটের ব্যথা কমাতে আদা রসের তুলনা নেই। আপনি যদি পিরিয়ডের সময় আদা চা পান করেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন। এছাড়াও আপনি আধা টুকরো করে কেটে নিয়ে মধু ও চিনির সঙ্গে গরম পানি মেশে পান করতে পারেন। এতে করে আপনার ব্যথাটা অনেকটাই কমে যাবে।
  • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ মাসিক বা পিরিয়ডের সময় খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, পনির, দই, চিজ, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি যোগ করুন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য আমরা অনেকেই নানা রকম পেইনকিলার ঔষধ খেয়ে থাকি। কিন্তু অধিক মাত্রায় পেইনকিলার খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য মোটেই ঠিক নয়। এছাড়াও ব্যথা কমানোর উপায় তো আপনার আইডি মধ্যে উপরে জেনে গেছেন। তাহলে কেনই বা আর পেইন কিলার খাবেন।

তারপরও যদি এই উপায় গুলো অবলম্বন করে ব্যথা সহনীয় না হয় তাহলে। আপনি যে ওষুধটি খেতে পারেন সেটি হলো-

  • আইবুপ্রোফেনঃ মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা দূর করার জন্য খুব ভালো এবং কার্যকারী ওষুধ হল আইবুপ্রোফেন। এই ওষুধ খাওয়ার ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে ব্যথা একদম কমে যায়।
  • প্যারাসিটামলঃ যাদের বয়স ১৬ বা তার বেশি তারা ৫০০ মিলিগ্রাম ১০০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট খেতে পারবেন। ৫০০মি.গ্রাম হলে একটি বা দুটি ট্যাবলেট খেতে পারবেন। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন ৮ ট্যাবলেটের বেশি না খাওয়া হয়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

প্রাকৃতিকভাবে মাসের নির্দিষ্ট একটি সময়ে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মাসিক বা পিরিয়ডের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় বা মাসিকের ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত ভাবে বলেই দিয়েছি।

আসলে মাসিক বা পিরিওড পিরিয়ড দুটো একই শব্দ। এর দ্বারা একটি মিনিং বুঝায়। সুতরাং নতুন করে আর পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে কোন কিছু বলার নেই। প্রথমে এই সব কিছু বলে দিয়েছি। আপনি প্রথমে ভালো করে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন। কিভাবে মাসিকের বা পিরিয়ডের ব্যথা কমানো যায়।

এতক্ষণ সম্পন্ন পোস্টে জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনি উপরের উপায় গুলো অবলম্বন করে মাসিকের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অবশ্যই আপনি আপনার পিরিয়ডের দিনগুলোতে এই উপায় গুলো অবলম্বন করবেন। আর কি রেজাল্ট পাচ্ছেন সেটা অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url