ছাত্র সমাজ ও রাজনীতি রচনা - ছাত্র জীবনে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা

ছাত্র সমাজ ও রাজনীতি রচনা এবং ছাত্র রাজনীতির উপকারিতা, ছাত্র রাজনীতির সুফল ও কুফল, ছাত্র রাজনীতি কেন প্রয়োজন, ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থা, ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস, বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস, ছাত্র রাজনীতির কুফল এই সকল বিষয়গুলো নিচে রচনা আকারে বর্ণনা করা হয়েছে।

ছাত্র সমাজ ও রাজনীতি রচনা - ছাত্র জীবনে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা


ছাত্র সমাজ ও রাজনীতি রচনা - ছাত্র জীবনে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা: অধ্যয়নই যাদের ব্রত, জ্ঞানসাধনার তপস্যায় খারা নিয়ত মশগুল, ছাত্রত্বের নামাবলি গায়ে দিয়ে তারাই দেশ ও জাতির উপরে হয়। শিক্ষাই জাতির মেবুদণ্ড। তাই জাতির মেরুদন্ডকে সোজা করার জন্য বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গোমাজ অপ্যায় এক। কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আজ গোটা ছাত্রসমাজই কলুমিত হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও ছাত্র উভয়ই এখন লেখাপড়া শেখানো ও শেখা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। তাদের কাছে বর্তমানে শিক্ষার চেয়ে জাউয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করা ও নিজস্বার্থ আদায় করা প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্ররা আজ বিভিন্ন সন্ধানী কার্যকলাপ, চাদাবাি টেন্ডারবাজির সলো জড়িয়ে পড়ছে। ফলে জাতির সামনে এক ঘোর অমানিশা বিরাজ করছে।

ছাত্রসমাজের মূল লক্ষ্য: ছাত্রসমাজের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব বহনের উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং দে উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান সংগ্রহ করা। এর জন্য অধ্যবসায়ের মাধ্যমে লেখাপড়া করতে হবে। নিজে শিক্ষিত না হলে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনে শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা দেওয়া সম্প নয়।

জীবনগঠন: জ্ঞান লাভের পাশাপাশি ছাত্রসমাজের আরো একটা বড় কাজ হচ্ছে জীবনগঠনের কঠোর সাধনা। এই ধারণা থেকে বিচ্যুত হলে ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে। জীবন সুগঠিত না হলে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনে সফলতা আশা করা যায় না।

চরিত্রগঠন: জীবনে আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা ও প্রবল অনুরাগই চরিত্রগঠনের প্রথম কথা। ছাত্রজীবনই চরিত্র গঠনের আসল সময়। তাই ছাত্রসমাজকে এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। নিজে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হলে রাজনৈতিক জীবনে তা সুফল বয়ে আনতে পারে।

ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি: আজকের ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের মাধ্যমেই একদিন পরিচালিত হবে দেশ। সে জন্য ছাত্রজীবন যেমন সফলভাবে গড়ে তুলতে হবে, তেমনি রাজনীতি সম্পর্কেও থাকতে হবে ধারণা। কারণ, রাজনৈতিক ধারণা না থাকলে দেশ চালানো সম্ভব নয়। এদিক থেকে ছাত্রসমাজ ও রাজনীতির সম্পর্কটা ঘনিষ্ঠ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ছাত্ররাজনীতি কী: ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, এটি হলো ছাত্রদের রাজনীতি। অধ্যয়নের পাশাপাশি তাদের স্বার্থ সংরক্ষন অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষার মান বাড়ানো, শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শিক্ষা শেষে উপযুর কাজের জন্য সংগ্রামই ছাত্ররাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু ছাত্রসমাজ এখন অস্ত্রের লড়াইয়ে লিপ্ত, জাতীয় নেতাদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। তাই ছাত্রেরাজনীতি আজ কলুষিত, একসময়ে জননন্দিত ছাত্ররাজনীতি আজ ভয়ানক নিন্দিত। আর এর মূলে কাজ করেছে ছাত্রদের মধ্যে সঞ্চারিত হতাশা, বেকারত্ব, জাতীয় রাজনীতিবিদদের স্বীয় স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার করার প্রবণতা ও দারিদ্র্য। তাছাড়া অর্থনৈতিক দীনতা, সামাজিক অস্থিরতা, ন্যায়বিচারের অভাব ছাত্রসমাজকে এ লক্ষ্যে নিমজ্জিত করেছে।

ছাত্ররাজনীতির পক্ষে: যাঁরা ছাত্ররাজনীতিকে সমর্থন করেন, তাঁদের মত হলো, ছাত্ররা দেশের সবচেয়ে প্রগতিশীল আশ, তারুণ্যের দীপ্তিতে তারা ভাষর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, জাতির দুঃসময়ে তাদের অবদান, সর্বোপরি জাতির আশা ও আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে তাদের কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য সব দেশেই ছাত্ররাজনীতি নন্দিত। আজকের ছাত্র আগামী দিনের জাতির আশা ও আকাঙ্ক্ষার ধারক ও বাহক। কাজেই ভবিষ্যতে যারা দায়িত্ব ও কর্তব্যসচেতন নাগরিক হয়ে সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালক হবে, তারা দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি থেকে দূরে থাকবে, তা তো হওয়ার নয়। তাছাড়া প্রগতিশীলদের ধারণা, শুধু। শিক্ষা নয়, শিক্ষার যথার্থতা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্রদের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন রয়েছে। আর আমাদের মতো অশিক্ষিতের দেশে ছাত্ররা সমাজের উল্লেখযোগ্য সচেতন অংশ। ছাত্রজীবন জীবনের একটি সংক্ষিপ্ত অংশমাত্র। তবে সুস্থ ও স্বাভাবিক ছাত্ররাজনীতি জাতীয় সমৃদ্ধিতে গতি সম্ভার করতে সক্ষম।

ছাত্ররাজনীতির গৌরবময় ঐতিহ্য: বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের এবং গৌরবময়। ব্রিটিশ শাসনের কথা বাদ দিলেও পাকিস্তানি শাসনামলে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঘটির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতাসংগ্রাম, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে সাফল্যের পেছনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রবল। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক এদ্ধ।, ভালোবাসা- প্রতিটি সৎগুণই ছাত্ররাজনীতির অন্যতম পূর্বশর্ত, যা পৌরবময় ছাত্ররাজনীতির মধ্যে বিরাজমান ছিল। ষাট দশকের গৌরবদীপ্ত রাজনৈতিক ইতিহাস আজও মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। কেননা তখন কেবল মেধাবী ছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতির নৃেতৃত্ব প্রদান করতেন। তাই ছাত্ররাজনীতি আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত।

ছাত্ররাজনীতির ক্ষতিকর প্রভাব: ভবিষ্যৎ জীবনের সুখসমৃদ্ধি জীবনের প্রস্তুতিপর্বের কাল। জীবনসৌধের ভিত্তি। ও সফলতা অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো ছাত্রজীবন। এ সময়টি হলো এ সময়েই স্থাপিত হয়। তাই এ সময়ে যদি কেউ ফাঁকি দেয়, অবহেলা করে সময় কাটায় তবে বাকি জীবনটা তাকে অসহনীয় কষ্টের মধ্যে কাটাতে হয়। রাজনীতির মতো জটিল বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এটি নয়। অযোগ্য মানবশক্তি যে রাজনৈতিক চৈতন্যের জন্ম দেয়, তা অপরিণত ও ব্লুজুগে, তার পরিণতি বিশৃঙ্খলার রাজনীতি। আদর্শভ্রষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থসিদ্ধির শিকার হয় তারা এবং শিক্ষাব্যবস্থায় নেমে আসে চরম বিপর্যয়। বর্তমানে আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি বলে কিছু নেই, যা আছে তা হলো কতিপয় তল্পিবাহক জাতীয় নেতাদের পদলেহন। আর ছাত্রদের চেয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীরাই নিয়ন্ত্রণ করছে বর্তমান ছাত্ররাজনীতিকে। ছাত্ররা ভুলতে বসেছে তাদের কর্তব্যবোধ, শিক্ষা থেকে তারা অনেক দূরে। নেতা হওয়ার সুখ স্বপ্ন তাদের তদ্রাচ্ছন্ন করে, সাধারণ ছাত্রদের আর কোনো আগ্রহ নেই ছাত্ররাজনীতি নিয়ে। ছাত্ররা আজ অধ্যয়নের বদলে সমাবেশ, মিছিলে সময় নষ্ট করে বেশি। তাছাড়া ছাত্রদের মধ্যে বিরাজিত হতাশা জাতির অগ্রগতির চাকাকে থামিয়ে দিয়েছে।

ছাত্ররাজনীতি ও বর্তমান প্রেক্ষাপট: ছাত্ররা আজ নিজেদের লেখাপড়ার চেয়ে রাজনীতি নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছে। ফলে তাদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারের দিকে ধাবমান। রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ছাত্ররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি কায়েম করছে। চলছে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের মহড়া, চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলো দখল ও পাল্টা দখলের ঘটনা। বুলেটের ভাষায় কথা বলতে গিয়ে তাদের হাতের কলম আজ নির্বাসিত। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সিট দখলের প্রক্রিয়ায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী দিশেহারা। শিক্ষাঙ্গনে আজ ভীতির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এটি নিয়ে কোনো মহলের কোনো উদ্বেগ লক্ষ করা যায় না। বক্তৃতা ও বিবৃতির মধ্যেই আজকাল সবকিছু সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু জাতি আজ এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।

ছাত্রসমাজের কর্তব্য: বর্তমানের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ছাত্রদেরকেই সচেতন হতে হবে। তাদের এগিয়ে আসতে হবে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনে। এটি অনুধাবন করতে হবে যে সক্রিয় অংশগ্রহণ আর রাজনৈতিক সচেতনতা এক কথা নয়। ছাত্র আন্দোলনের অতীত গৌরব আমাদের ভুলে গেলে গেলে চলবে না। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, '৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ আমাদের মধ্যে যে সচেতনতার জন্ম দিয়েছিল, তার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে। পাঠ্যবইয়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক ধারণাকে সুসংহত করার জন্য বিভিন্ন বই পড়তে হবে। কেননা রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাত্রদের জন্য তয়নই সার্থক ও ফলপ্রসূ হবে, যখন থাকবে প্রস্তুতির অনুশীলন, থাকবে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার নিশ্চয়তা। বন্ধ করতে হবে অস্ত্রের ঝনঝনানি। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। আর দলমত। মত নির্বিশেষে সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ছাত্রদেরকে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ নয়, রাজনীতি জানার দিকেই আগ্রহী হতে হবে অনেক বেশি।

উপসংহার: আমাদের দেশে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির নামে যা চলছে, তা আসলে রাজনীতি হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে না। ছাত্ররাজনীতির নামে চলছে উদ্ভট ক্ষমতার প্রদর্শনী, জাতীয় রাজনীতির বিকৃত বিকাশ। এজন্য আমরা এর হাত থেকে পরিত্রাণ চাই , চাই ছাত্রদের সুস্থ বিকাশের ধারাকে অব্যাহত রাখতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url