কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কলার ক্ষতিকর দিক

কলা ঋতু নিরপেক্ষ ফল, যার কারণে এটি সারা বছর পাওয়া যায়। এটি যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতায় ভরপুর। আমরা অনেকেই জানিনা কলা খাওয়ার উপকারিতা কি। এছাড়াও আপনি কি জানেন কলার ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আসলে পরিমাণের তুলনায় বেশি খেলে কলা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হয়। 

কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কলার ক্ষতিকর দিক

কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি এবং কলার ক্ষতিকারক দিক কি। এসব কিছু জানতে আজকে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে আপনাদেরকে জানাবো কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সেই সাথে জানাবো কলার ক্ষতিকারক দিক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - কলার ক্ষতিকর দিক

গরমে কেন কলা খাবেন

কলা পাওয়া যায় সারা বছর। কলায় অ্যাসিডের পরিমাণ কম, যা অ্যাসিডিটি, মাইগ্রেন বা পায়ের পেশী টানের সমস্যা দূর হতে পারে। শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায় কলা। যারা শরীরচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ক্যালরির ঘাটতি পূরণে স্বাস্থ্যকর উপায় কলা।

গরমের কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। আর এ পানি শূন্যতা দূর করার জন্য আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হয়। যদি সব সময় পানি পান করতে ভালো না লাগে তাহলে আপনি চাইলে বিভিন্ন ফলের জুস বানিয়ে খেতে পারেন। শরীরে অন্যান্য জুসের চেয়ে কলার জুস অত্যন্ত উপকারী।কলার জুস আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দিবে।

  • গরমের শরীরের পানি ফুরিয়ে যায় দ্রুত। যার ফলে শরীরে পানি শূন্যতার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কলায় থাকা ফাইবার ও ফ্রুটুস এর সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
  • কলার পটাশিয়াম পেশিকে স্বস্তি দেয়। সারাদিনের কাজের পর সন্ধ্যায় বা বিকালের নাস্তায় কলা থাকলে রাতে ভালো ঘুম হবে।
  • গরমে যারা শরীরচর্চা করেন, তাদের ক্যালোরি ঘাটতি পূরণ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে কলা।
  • শরীরের দ্রুত শক্তি জোগাতে কলা বেশ উপকারী। তাই গরমে যারা দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাদের জন্য কলায় আদর্শ ফল। 

কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা একটি ঋতু নিরপেক্ষ ফল, যা আমরা ১২ মাসই পাই। পাকা কলা খেতে যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনি এর পুষ্টিগুণ ও অনেক রয়েছে। অনেকে রয়েছেন যারা সকালের নাস্তায় কলা খেয়ে কাটিয়ে দেন। করার মধ্যে এত এত কষ্ট কেন হয়েছে যে সকালের নাস্তা যদি আপনি শুধু কলা খান তাহলে আপনি সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারবেন অনায়াসে।

পাকা কলা খেতে মিষ্টি, এর জন্য ভাববেন না যে আপনার সুগার লেভেল হাই হয়ে যাবে। কলার জিআই ভ্যালু অত্যন্ত কম। তাই আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন তাহলেও আপনি নিশ্চিন্তে কলা খেতে পারবেন। শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করতে কলার জুড়ি নেই। এজন্য আপনার শরীর যদি বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে বা ওজন কমে গেলে চিকিৎসকেরা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

  • আপনার যদি হজমের কোন সমস্যা থাকে ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে নিয়মিত কলা খান। কলার মধ্যে রয়েছে ফাইবার যা এই সমস্যাগুলো দূর করতে সহায়তা করে।
  • দ্রুত ক্ষুধা দূর করতে কলা খাইতে পারেন। এতে খুব অল্প ক্যালোরি থাকায় ওজন বাড়ার কোনো ভয় নেই। এজন্য আপনি পেট ভরে কলা খেতে পারেন। আর কলা আপনার ক্ষুধার্ত পেট কে দ্রুত ভার পেট করে তুলবে।
  • কলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। যার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই কলা খাবেন। তাহলে এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
  • কলা হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়। কেননা কলার মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম, যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি ২৭% কমিয়ে দিবে।
  • এছাড়াও আপনি যদি নিয়মিত কলা খান তাহলে আপনার কিডনি ভালো থাকবে। এজন্য আপনি গরমের সময় একটু বেশি বেশি চেষ্টা করবেন কলা খাওয়ার।
  • আন্টি-অক্সিজেনের চমৎকার একটি উৎস হচ্ছে কলা। এটি খেলে যে আপনি শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন তা কিন্তু না তা কিন্তু নয়, কলা আপনার ত্বক ও চুল উভয় ভালো রাখবে।
  • কলার মধ্যে আয়রন রয়েছে। আয়রন রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিন তৈরিতে কাজ করে। আয়রনের ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা হয়। এক মাস দিনে দুটি করে কলা খেলে রক্তের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে।
  • ভালোভাবে প্রসব হওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কলা খাওয়া প্রয়োজন। কলা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এটি গর্ভাবস্থায় সকালের ক্লান্তি ভাব দূর করে।
  • কলায় কম সোডিয়াম রয়েছে। তবে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর। এতে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন দুটি কলা খেলে ৪০ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত

আমরা অনেকেই রয়েছি যারা কলা খেতে অত্যন্ত পছন্দ করি, আবার অনেকে রয়েছে যারা কলা একদমই পছন্দ করেন না। তো আমরা যারা কলা পছন্দ করি তাদের মনে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত। আমরা কলার উপকারিতা জেনে বা না জেনে অধিক পরিমাণে কলা খেয়ে থাকি।

কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে দিনে কয়টি কলা খেতে হয়। কোন একটি পুষ্টিকর খাবার হওয়ার পাশাপাশি এর বেশ উপকারিতা হয়েছে, যদি আপনি নিয়মিত কলা খেয়ে থাকেন, তাহলে সেই উপকারগুলো আপনি পাবেন।

খাদ্য ও পুষ্টিবিদদের মতে, একটি মাঝারি মাপের কলায় ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩ গ্রাম আঁশ, ১৪ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি, ১০৫ ক্যালোরি এবং অনেক প্রয়োজনীয় মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টস থাকে। কলার এই পোস্টটি গুণ অনুযায়ী দিনে দুইটি কলা খাওয়া উচিত। আপনি চাইলে দুইটির বেশিও খেতে পারবেন।

তবে যদি ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় থাকেন; পুষ্টিবিদদের পরামর্শ- মাঝারি আকারের বা ৫ ইঞ্চি মাপের একটি কলা খাওয়া যেতে পারে। এটি অবশ্যই শারীরিক পরিশ্রম করার আগে বা পরে খেলে বেশি উপকারী।

প্রতিদিন কলা খেলে ৫টি শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন- মানসিক চাপ থেকে মুক্তি, হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি, ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা, হজমজনিত সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

মানসিক চাপঃ কলার মধ্যে ট্রিপটোফ্যান নামের একটি উপাদান পাওয়া যায়। এটি শরীরের সেরটোনিন তৈরি করতে কাজ করে। সেরোটোনিন মানসিক চাপ কমাতে খুবই উপকারী।

হার্টের সমস্যাঃ পটাশিয়াম হার্ট কে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। আর কলার মধ্যে আমরা প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম পাই। এছাড়াও কলা ভিটামিন বি সিক্স সমৃদ্ধ। এজন্য আপনি কলা খাইতে পারেন।

হজমের সমস্যাঃ আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি এবং বদহজমের মতো সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে থাকেন তবে কলা খাওয়া আপনার জন্য অত্যন্ত কার্যকারী। কেননা কলা খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

ত্বকের সমস্যাঃ আপনার ত্বকে যদি নানা ধরনের মেছতা দাগ, অথবা প্রতিনিয়ত ব্রণ বের হয় তাহলে আপনি কলা খেতে পারেন। এটি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করবে এবং ত্বকের সমস্যা গুলো দূর করবে।

কলার ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা

কলা খেতে অনেক সুস্বাদু, সেই সঙ্গে এর পুষ্টিগ্ন অনেক। তাই বলে যে আপনি এটি অধিক পরিমাণে খাবেন তা কিন্তু না। সব কিছুরই একটা লিমিট আছে, অর্থাৎ সব কিছু পরিমাণ মত খেতে হবে। আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে সেদিন তার বিপরীত হবে। ঠিক তেমনি অতিরিক্ত কলা খেলে গলারও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে সেগুলো আপনার ওপর প্রভাব ফেলবে।

চলুন জেনে নিয়ে কলার ক্ষতিকারক দিকগুলো-

  • মাইগ্রেনঃ আপনার যদি মাইগ্রেনের সমস্যা থাকে তাহলে কলা এড়িয়ে চলুন। কলায় টাইরামাইন নামে এক ধরনের উপাদান থাকে, যা মাইগ্রেনের সমস্যা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।
  • অ্যালার্জিঃ কলা অনেক সময়ই অ্যালার্জির কারণ হয়ে থাকে। ঠোঁট ফুলে যায়, গলা জ্বালা করে।
  • ওজন বৃদ্ধিঃ মাঝারি মাপের একটি পাকা কলায় ১০৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। তাই বেশি কলা খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।
  • দাঁতের ক্ষয়ঃ প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকায় বেশি কলা খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। এমনকী দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য কলা চকোলেটের থেকেও বেশি ক্ষতিকর।
  • ক্লান্তিঃ পাকা কলাতে ট্রিপটোফ্যান আমাইনো অ্যাসিড থাকে। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। দেহে ক্লান্তি আসে এবং সব সময় ঘুম পায়।
  • নার্ভঃ ভিটামিন বি৬ বেশি খাওয়ার প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়ে থাকে। কলায় এই ভিটামিনের আধিক্য আছে তাই খুব বেশি কলা খাওয়া উচিত নয়।
  • পেট ব্যথাঃ বাজার থেকে কেনা কলার বেশির ভাগই রাসায়নিকের সাহায্যে পাকানো হয়ে থাকে। তা ছাড়াও কলায় শর্করার পরিমাণ খুব বেশি। এসবের জন্য পেট ব্যথা হতে পারে।
  • গ্যাসঃ কলাতে থাকা ফ্রুক্টোজ এবং ফাইবার এক সঙ্গে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। [সূত্র: সমকাল]
  • ডায়াবেটিসঃ সুগারের পরিমাণ বেশি থাকায় অত্যধিক মাত্রায় কলা খেলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে।

সবশেষে বলা যায় যে গলার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা রয়েছে অর্থাৎ ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। এজন্য আমরা চেষ্টা করব প্রয়োজন মত এবং পরিমাণ মতো কলা খাওয়ার। পরিমাণ এর বেশি নাও খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। আপনি যদি পরিমাণ মতো কলা খান তাহলে আপনার শরীরে পুষ্টি গুণের কোন অভাব হবে না। এজন্য আপনারা পরিমাণ মতো কলা খাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url