গর্ভাবস্থায় পেট বড় হয় কখন - কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে

গর্ভধারণ করা থেকে শুরু করে গর্ব অবস্থায় প্রতিটি মায়ের জন্য একটি সুন্দর মুহূর্ত। এই সময়ে একটি হবু মায়ের মনে নানা রকম প্রশ্ন থাকে যেমন ধরেন গর্ব অবস্থায় পীর বড় হয় কখন বা কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে এই বিষয়গুলো জানার জন্য হবু মা খুবই উদ্বেগ হয়ে থাকেন। 

গর্ভাবস্থায় পেট বড় হয় কখন - কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে

এছাড়া আরো অনেক বিষয় রয়েছে যে বিষয়গুলো হবু মায়েরা জানার জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন যেমন ধরেন- বাচ্চা পেটের কোন দিকে থাকে, নাভি দেখে সন্তান বুঝার উপায়, গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন, গর্ভাবস্থায় কত মাসে বুকে দুধ আসে এই সকল বিষয়গুলোই আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয়। এই সকল বিষয়ে গুলো সম্পর্কে জানতে পোষ্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্র

গর্ভাবস্থায় পেট বড় হয় কখন

প্রতিটি মায়ের জন্য গর্ভ অবস্থা একটি সুন্দর মুহূর্ত। আর এই গর্ব অবস্থায় যদি প্রথমবার হয় তাহলে সেটি তো আরো অনেক বেশি সুন্দর মুহূর্ত। এই সময় মায়েরা নানা ধরনের চিন্তাভাবনা করে থাকেন। বাচ্চা কেমন হতে পারে, বা আমার বাচ্চাকে কিভাবে বুদ্ধিমান ও সুন্দর করা যায় ইত্যাদি, নানান কথা ভেবে থাকেন।

যারা প্রথমবার গর্ভ ধারণ করেন তাদের মনে একটা প্রশ্ন সব সময় দেখা দেয়, সেটি হচ্ছে গর্ব অবস্থায় পেট বড় হয় কখন। সাধারণত পাঁচ মাসের পর থেকে অল্প অল্প করে পেটের আকার বাড়তে থাকে। তবে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ভালো হলে পরিবর্তন স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়াও যদি অধিক পুষ্টি গ্রহণের ফলে বাচ্চার গ্রোথ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায় তাহলে চার মাস হওয়ার পর থেকেই পেটের আকৃতি বড় দেখায়। আর এই বাচ্চা হওয়ার সময় খুব স্বাস্থ্যবান হয়। তবে এই বিষয়টা সকলের সাথে তো আর হয় না। তাই সাধারণত ৫ মাসের পর থেকে পেটের আকার বৃদ্ধি পায়।

আসলে মূল কথা হচ্ছে যে একজনার ছয় মাসে পেট বড় হয়েছে, তাই বলে যে আপনার হবে এর কোন অর্থ নেই। সকল মহিলার শারীরিক গঠন আলাদা আলাদা তাই এই বিষয়গুলো কখনোই ম্যাচিং করবে না। তবে সাধারণভাবে পাঁচ মাসের পর থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেটে রাখার বড় হয়ে থাকে।

কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে

গর্ভ অবস্থা প্রতিটা মহিলাদের জন্য একটি সুন্দর এবং স্মৃতি মধুর সময়। নিজের পেটে নিজের বাচ্চা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা দেখতে যে কি আনন্দ লাগে তা শুধু মায়েরাই জানে। এই সময় অনেক কৌতুহলী হয়ে ওঠেন, এবং তারা জানতে চান কত মাসে বাচ্চা নড়াচড়া করে। চলুন জেনে নেই-

সাধারণত গর্ভধারণের চার মাসের পরে, অর্থাৎ ১৬ সপ্তাহ হতে ২৪ তম সপ্তাহের মধ্যে একজন গর্ভবতী মা প্রথমবারের মতো শিশুর নড়াচড়া অনুভব করা শুরু করে। এর মধ্যে বেশিরভাগ নারীই গর্ভধারণের ১৮ সপ্তাহ থেকে ২০ তম সপ্তাহে প্রথমবারের মতো এই নড়াচড়া ভালোভাবে অনুভব করে। গর্ভধারণের সময় বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পেটের ভিতর শিশুর নড়াচড়াও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

কোনো নারী প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হলে গর্ভ অবস্থায় ২০ সপ্তাহ পার হওয়ার আগ পর্যন্ত গর্ভের শিশু নড়াচড়া না-ও বুঝতে পারেন। আবার অনেকের ২০ তম সপ্তাহ পার হয়ে যায় তারপরেও বুঝতে পারেন না, কেননা তারা প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হয়েছেন, সেজন্য ভালো মতো বুঝতে পারেন না।

গর্ভ অবস্থায় ৭ থেকে ৮ মাসে অর্থাৎ ২৪ তম সপ্তাহ থেকে ৩২ তম সপ্তাহে সময়ের সঙ্গে গর্বের শিশুর নড়াচড়াও বাড়তে থাকে। গর্ভধারণের ৩২ তম সপ্তাহ পর্যন্ত গর্বের শিশুর নড়াচড়া এভাবে প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে। এছাড়াও দিন ও রাতের পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশুর নড়াচড়ার ধরনও ভিন্নতা দেখা দেয়।

গর্ভের শিশুকে সাধারণত বিকেল ও সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া করতে দেখা যায় বা অনুভব করা যায়। আবার গর্ভের শিশু যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন শিশুর নড়াচড়া টের পাওয়া যায় না। এই সময়টুকু কে স্লিপ সাইকেল বা ঘুমচক্র বলা হয়। দিনে ও রাতে নিয়মিত বিরতিতে এই ঘুমচক্র চলতে থাকে। পরীক্ষায় দেখা যায় এক একটি চক্র সাধারণত ২০ থেকে ৪০ মিনিট স্থায়ী হয়।

বাচ্চা পেটের কোন দিকে থাকে

একজন নারী যখন গর্ভধারণ করেন তখন তার শরীর পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অনেকটাই দূরে চলে যায়। বলতে গেলে প্রায় অনেকটা সময় নিজেকে দুর্বল বোধ করেন। গর্ব অবস্থায় গর্ভধারিনী মা এবং তার পুরো পরিবারসহ সকলেই খুব চিন্তিত থাকেন। এর জন্য গর্ব অবস্থায় নিজের শরীরের অধিক যত্ন নিতে হবে।

গর্ভের বাচ্চার অবস্থান অনুযায়ী বাচ্চার সুস্থতা নির্ভর করে, এবং বাচ্চার যে পজিশনে বা অবস্থানে থাকে সেই পজিশন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি মায়ের জন্য। বর্তমানে এবং পূর্বে অনেক লোক বাচ্চার অবস্থান নিয়ে ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা নির্ণয় করত। তবে আপনার জানা উচিত যে এই ধারণাটি একটি ভ্রান্ত এবং সঠিক না।

মানুষের লোকও কথায় গান না দিয়ে সঠিক বিষয়টি সে সম্পর্কে জানতে হবে। সেজন্যই আজকের আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে বাচ্চা পেটের কোন দিকে থাকে বা বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে। চলুন দেরি না করে জেনে নেই-

স্বাভাবিকভাবে বলতে গেলে বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে তা নির্দিষ্ট অবস্থান করে বলা সম্ভব নয়। মায়ের গর্ভে যখন ভ্রুন বড় হতে থাকে তখন পেটের বাচ্চা স্বাভাবিকভাবেই এর অবস্থান পরিবর্তন হতে থাকে। যখন ছোট থাকে তখন পেটে বাচ্চা অবস্থান থাকে এবং যখন আস্তে আস্তে বড় হয় সাথে সাথে বাচ্চার অবস্থান পরিবর্তন হতে থাকে।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চার সবচেয়ে সাধারণ এবং অনুকূল অবস্থান হল শীর্ষস্থানীয় অবস্থান, যা সিফালিক উপস্থাপনা নামে পরিচিত। এই অবস্থানে, বাচ্চার মাথা নীচে যোনিপথে দিকে থাকে এবং বাচ্চার পিঠ মায়ের পেটের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই প্রান্তিককরণটি যোনিপথে জন্মের সময় একটি সর্বোত্তম এবং সহজবোধ্য প্রসবের সাহায্য করে।

যখন বাচ্চাটি শীর্ষবিন্দুতে থাকে, তখন আপনি সাধারণত আপনার পেটের বিপরীতে বাচ্চার পিঠ অনুভব করবেন। আপনি আপনার পেটে আলতো করে আপনার হাত রাখার সাথে সাথে আপনি পৃষ্ঠ বরাবর শিশুর পিঠের দৃঢ়তা লক্ষ্য করতে পারেন, যা একটি শিশুর পিঠ নির্দেশ করে। এই অবস্থানে শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন বাহু এবং পা, পেটের সামনে বা পাশের দিকে বেশি অনুভূত হতে পারে। [সংগৃহীত]

নাভি দেখে সন্তান বুঝার উপায়

আমাদের গ্রামে পাড়া প্রতিবেশী অনেকেই রয়েছেন যারা গর্ভ অবস্থায় নাভি দেখে সন্তান বুঝার চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু আদৌ কি নাভি দেখে সন্তান বোঝা যায়। সাধারণত গর্ব অবস্থায় নাভি বাইরের দিকে বেরিয়ে আসা, ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, নাভির আকার ফুলে যাওয়া সাধারণ ঘটনা। সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে নাভির আকার সঠিক সূচনা দিতে পারেনা।

তবে সন্তান বোঝার ক্ষেত্রে কিছু উপায় রয়েছে, যা নাভি দেখে সন্তান বোঝার উপায় হিসেবেও বিবেচিত হয়। সে উপায় গুলো কি চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই-

  • প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী গর্ভ অবস্থায় সন্তানের হৃদস্পন্দন আর যত বেশি হবে মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
  • মেয়ে হলে মুড সুইংস বেশি হয়। কথায় কথায় রাগ ও কান্না পায়, আবার ছেলে হলে ঠিক এর উল্টাটা হয়।
  • মর্নিং সিকনেস বেশি হয় মেয়ে হলে। অর্থাৎ বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা দেখা দেয়। আর ছেলে হলে সাধারণত মায়ের মধ্যে এরকম কোনও সমসম্যাই থাকে না।
  • শোওয়ার ধরন দেখেও বোঝা যায় ছেলে না মেয়ে। ছেলে হলে সাধারণত বাঁ দিক ফিরেই শুতে বেশি পছন্দ করে মায়েরা, আর মেয়ে হলে ডান দিক ফিরে শুতে নাকি বেশি ভালো লাগে।
  • গর্ভাবস্থায় বেশি করে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছে হওয়ার অর্থ হল শরীরের ভেতর কন্যা সন্তান বেড়ে ওঠছে। আর মায়ের যদি খুব ঝাল বা টক খেতে ইচ্ছে করে তাহলে ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • বেবি বাম্প দেখেও বোঝা যায় সন্তান ছেলে না মেয়ে। বেবি বাম্প যদি নীচের দিকে ঝোলা থাকে তাহলে ছেলে হবে বলেই মনে করা হয়। অন্য দিকে, মেয়ে সন্তান থাকলে বেবি বাম্প থাকে পেটের মাঝামাঝি জায়গায় ও উঁচু হয় বেশি।
  • ত্বক ও চুলে তেলতেলে ভাব, ব্রণ-র সমস্যা দেখা দিলে ধরে নেওয়া হয় কন্যা সন্তান আসতে চলেছে। আর হবু মা যদি দেখতে আরও সুন্দরী হয়ে যায়, তাহলে পুত্র সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

গর্ভাবস্থায় পেট শক্ত হয় কেন

গর্ভাবস্থায় পেট যে শক্ত লাগা এটা যে খুব অস্বাভাবিক একটা বিষয় তা কিন্তু না। এটি খুবই সাধারণ একটি বিষয় এর শক্ত হতেই পারে। কেননা গর্ব অবস্থায় প্রথম তিন মাস আপনার বাড়ন্ত শিশুর কারণে বড় হয়ে যাওয়া জরায়ু চারপাশে চাপ দিতে থাকে। এ কারণে পেট শক্ত লাগতে পারে।

আবার জরায়ুর পেশিগুলো প্রসারিত ও দীর্ঘ হওয়ার কারণে আপনার হঠাৎ করে পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে। তবে এগুলো যে সন্তানের ক্ষতি হবে তা কিন্তু মোটেও নয়। তাই চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই।যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে হবে। আর যদি মাত্রা অতিরিক্ত ব্যথা হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে পেটটি শক্ত এবং টানটান অনুভূত হয়। দিন কেটে যাওয়ার সাথে সাথে পেট পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে অস্বস্তি আরও বাড়তে পারে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে শক্ত পেট সহ, আপনি পেটে বৃত্তাকার লিগামেন্ট ব্যথা বা তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারেন। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, পেট শক্ত হওয়া প্রসব শ্রমের লক্ষণ হতে পারে। [সংগৃহীত]

গর্ভাবস্থায় কত মাসে বুকে দুধ আসে

একজন গর্ভবতী মহিলার সাধারণত গর্ব অবস্থায় ১৬ তম থেকে ২২ তম সপ্তাহের মধ্যে বুকে দুধ তৈরি হয়। তবে অনেক মহিলা অনেক দ্রুত যেমন ১৩ তম সপ্তাহেও বুকে দুধ তৈরি হওয়া শুরু হয়ে যায়। এই প্রাথমিক দুধকে কোলোস্ট্রাম বলা হয় এবং এতে পুষ্টি উপাদান ও অ্যান্টিবডির পরিমাণ প্রচুর থাকে যা নবজাতককে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

প্রসবের সময় বেশিরভাগ মহিলার স্তনে পরিপূর্ণ দুধ তৈরি হয়, যাতে কোলোস্ট্রামের তুলনায় অ্যান্টিবডির পরিমাণ কম থাকে, কিন্তু এটি পুষ্টিউপাদানে ভরপুর থাকে। অনেক মহিলাদের স্তন্যদুগ্ধ তৈরি হয় না বা খুব সামান্য পরিমাণে তৈরি হয়। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ডিসঅর্ডার, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ বা অপর্যাপ্ত গ্র্যান্ডিউলার টিস্যুর মতো শারীরিক অবস্থায় হয়।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, আগে হওয়া কোনো ব্রেস্ট সার্জারি ও মানসিক বিষয়ও এর কারণ হতে পারে। আপনার যদি স্তন্যদুগ্ধ তৈরিতে সমস্যা হয়, তাহলে সম্ভাব্য কারণ ও চিকিৎসার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

অর্থাৎ গর্ভ অবস্থায় ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে মায়ের বুকের দুধ তৈরি হয়। এই দুধে অধিক পরিমাণ পুষ্টি উপাদান ও অ্যান্টিবডি প্রচুর পরিমাণে থাকে যা নবজাতকের সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url