লিউকেমিয়া কেন হয় - লিউকেমিয়া প্রতিরোধ - লিউকেমিয়া এর লক্ষণ

লিউকেমিয়া কে সাধারনত রক্তের ক্যান্সার বলা হয়ে থাকে। এখন মনে প্রশ্ন হচ্ছে এটি কেন হয়, এর লক্ষণ গুলো কি, এটি কি প্রতিরোধ করা যায় কিনা বা লিউকেমিয়া ভালো হয় কিনা এসব কিছুই প্রশ্নের সমাধান নিয়ে আজকের এই পোস্ট। লিউকেমিয়ার লক্ষণগুলো কি বিস্তারিত জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন। 

লিউকেমিয়া কেন হয় - লিউকেমিয়া প্রতিরোধ - লিউকেমিয়া এর লক্ষণ
এছাড়াও আজকের এই পোস্টে আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন তার নিচে রিয়াল অনুসারে দেওয়া রয়েছে। তাই লিউকেমিয়ার এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

সূচিপত্র

লিউকেমিয়া কাকে বলে

লিউকেমিয়া হচ্ছে মূলত রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার। অল্প বয়সীদের মধ্যে এই রোগ বেশি হয়।লিউকেমিয়া ব্লাড ক্যান্সার বা রক্তের ক্যান্সার নামেও পরিচিত। এই রোগের প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। রক্তে বা অস্থিমজ্জায় যে ক্যান্সার হয় সাধারণত তাকে লিউকেমিয়া বলে।

ধূমপান, তেজস্ক্রিয়তা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল মূলত লিউকেমিয়া রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। লিউকেমিয়া হলে স্বাভাবিকভাবে রক্ত উৎপাদন ব্যহাত হয়। ফলে শরীরে নানারকম উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন- খাবারে অরুচি, শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, বুক ধরফর করা, ঘন ঘন ইনফেকশন বা জ্বর হওয়া, গায়ে ব্যথা, গায়ে কালো দাগ হওয়া, শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া, লিভার বড় হওয়া ইত্যাদি।

লিউকেমিয়া কেন হয়

নিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার কেন হয় সেই বিষয়ে সঠিকভাবে এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো ব্লাড ক্যান্সারের পরিমাণটা বৃদ্ধি করে দেয়। যেমন- রেডিয়েশন, ভেজাল খাবার, কেমোথেরাপি ড্রাগস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, কীটনাশক ও কিছু জেনেটিক অসুখ এটি বৃদ্ধি হওয়ার জন্য দায়ী থাকে।

এছাড়াও ধূমপান, তেজস্ক্রিয়তা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল মূলত লিউকেমিয়া রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে এসব কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে বা দূরে দূরে থাকতে হবে। এই ব্লাড ক্যান্সার অনেক ক্ষতিকর। এজন্য ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়ার কোন লক্ষণ যদি বুঝতে পারেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। লিউকেমিয়ার লক্ষণগুলো নিচে বর্ণনা করা হবে।

লিউকেমিয়া এর লক্ষণ

এই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর মারা যায় অসংখ্য মানুষ। বেশিরভাগ মরণঘাতী রোগ আগেভাগে ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা সুস্থ হওয়া সম্ভব। অনেক রোগ রয়েছে যেসব রোগের লক্ষণ আগেভাগে প্রকাশ পায় তেমনি একটি রোগ হচ্ছে লিউকেমিয়া।

তবে সব লক্ষণ বা যেকোনো একটি বা দুইটি লক্ষণ মিলে গেলে যে সে রোগ হয়েছে তা কিন্তু নয়। তবে এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলেই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে লিউকেমিয়ার লক্ষণ তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে এমন নাও হতে পারে। তবে কিছুদিন যাবত যদি একই লক্ষণ একটানা দেখা যায় তবে সতর্ক হতে হবে।

লিউকেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে যে লক্ষণ গুলো বেশি দেখা যায় এবং যে লক্ষণ গুলো আপনার শরীরে যদি দীর্ঘদিন যাবত মানে কয়েক মাস যাবত একটানা দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে। সেই লক্ষণগুলো হলো-

  • সহজেই সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা
  • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • অল্প আঘাতেই রক্তপাত হওয়া
  • শরীরের বাম পাজরে নিচে ব্যথা অনুভব হওয়া
  • খাবারে অরুচি হওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া
  • অত্যাধিক ঘাম হওয়া
  • হাড়ে ব্যথা হওয়া
  • ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়া
  • পেশিতে ব্যথা হওয়া
  • বারবার নাক দিয়ে রক্ত পড়া
  • ফোলা লিম্ফ নোড
  • দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত
  • দীর্ঘদিনের জ্বর
  • ত্বকে লাল রেশ দেখা দেওয়া

লিউকেমিয়া বা রক্তে ক্যান্সার হওয়ার পর মূলত এই লক্ষণগুলো বেশি দেখা দেয়। এই লক্ষণ গুলোর মধ্যে কোন লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে কয়েক মাস যাবত কমাগত দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন এবং রক্ত পরীক্ষা করে দেখবেন।

লিউকেমিয়া প্রতিরোধ

বর্তমানে রোগ নির্ণয়ের জন্য বাংলাদেশ ভালো ভালো সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে ভালো লেভেলের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব। রক্তের ক্যান্সার অর্থাৎ ব্লাড ক্যান্সার রয়েছে কিনা তাও পরীক্ষা করা যায়। আমরা সাধারণভাবে যে পরীক্ষাটা করে থাকি, সেটা হল ব্লাড কাউন্ট।

বাংলাদেশ ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসার উন্নতি হয়েছে। এখন সরকারি এবং প্রাইভেটে দুই জায়গাতে হাই লেভেলের চিকিৎসা দেয়া হয়। বাংলাদেশের বর্তমান চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রোগী অনেক উপকৃত হচ্ছেন। আমাদের যে বিদেশে যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

লিউকেমিয়া প্রতিরোধ যে ব্যবস্থাগুলো নিয়ে উপকৃত হওয়া যায়, বা যেভাবে লিউকেমিয়া প্রতিরোধ করা যায় তা নিচে বর্ণনা করা হলো-

  • প্রথম পরীক্ষা ব্লাড টেস্ট ৷ এতে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ খুব কম বা বেশি পাওয়া গেলে, প্লেটলেট ও হিমোগ্লোবিন খুব কমে গেলে এবং অস্বাভাবিক রক্ত কণিকা দেখা গেলে ব্যাপারটা চিন্তার ৷ কমপ্লিট হিমোগ্রাম টেস্ট করে অস্বাভাবিক রক্ত কণিকা নিশ্চিত করে পাওয় গেলে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে পরবর্তী পরীক্ষা করতে হবে।
  • ২-৩ সপ্তাহে মতো জ্বর, কখনও ১০০-র মধ্যে, কখনও ১০১-১০২, ওষুধে সাময়িক কমে, আবার বেড়ে আগের মত হয়ে যায়। হাড়ের ব্যথা, গলায় লাল রেশ, নখ ও দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্তপাত, মাড়ি ফুলে যাওয়া এসব কিছু ওর জন্য যদি এন্টিবায়োটিক খেয়ে না কমে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • এরপর রক্ত টেস্ট মানে রক্ত পরীক্ষা করার পরে যে টেস্ট কি করতে হয় সেটি হচ্ছে বোনম্যারো টেস্টিং। লোকাল অ্যানেসথেসিয়া করে জায়গাটা অবশ করে বিশেষ ধরনের সুঁচের সাহায্যে কোমর বা বুকের হাড়ের মধ্যে থেকে অস্থিমজ্জা বা বোনম্যারো সংগ্রহ করে তার বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন, সাইটোলজি, সাইটোকেমিস্ট্রি, ইমিউনোফেনোটাইপিং, সাইটোজেনেটিক্স ইত্যাদি করা হয়, এক্ষেত্রে যদি ক্যান্সার থাকে তাহলে ধরা পড়ে যায়।

লিউকেমিয়া কি ভালো হয়

নিউকেমিয়া যেহেতু এক ধরনের রক্তের ক্যান্সার, তাই এই রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নেয়া হয় তাহলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর বাকি বাঁচা-মরা সেটা তো উপরওয়ালার হাতে। তাই বলে যে চিকিৎসা নিবেন না, তা করা যাবে না।

লিউকেমিয়ার বিভিন্ন লক্ষণ উপরে বর্ণনা করা হয়েছে, সেই লক্ষণ গুলোর মধ্যে কোন লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত একটানা দেখা দেয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিবেন এবং সঠিক চিকিৎসা নিবেন। আর এক সঙ্গে যদি চার-পাঁচটা লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

সঠিক সময় যদি সঠিক চিকিৎসা নেওয়া যায় তাহলে লিউকেমিয়া ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই লিপোমিয়ার কোন লক্ষণ দেখতে পেলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। সকলে ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

লিউকেমিয়া কত প্রকার ও কি কি

লিউকেমিয়া মূলত এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় লিউকেমিয়া প্রধানত চার প্রকার বা চার ধরনের হয়, যেমন-

  • মাইলয়েড লিউকেমিয়া: এই লিউকেমিয়া মূলত শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হয় তবে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে।
  • লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া: এই লিউকেমিয়া সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে, এটি খুবই তীব্র লিউকোমিয়া। যত দ্রুত সম্ভব এর সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।
  • মাইলোজেনাস লিউকেমিয়া: এই লিউকেমিয়াও মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের বেশি প্রভাবিত করে। কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
  • লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া: এই লিউকেমিয়াও সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের কে বেশি আক্রমণ করে, অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।

লিউকেমিয়ার প্রধান উপসর্গ কী

লিউকেমিয়া হচ্ছে এক ধরনের রক্তের ক্যান্সার। যারা বিভিন্ন স্টেজে বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। এই রক্তের ক্যান্সারের বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। সে ভাগ বা প্রকারভেদ গুলো কি উপরে নিশ্চয়ই আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। নিউকেমিয়ার প্রধান উপসর্গ কি বা প্রধান লক্ষণ গুলো হচ্ছে-

  • সহজেই সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা
  • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • অল্প আঘাতেই রক্তপাত হওয়া
  • শরীরের বাম পাজরে নিচে ব্যথা অনুভব হওয়া
  • খাবারে অরুচি হওয়া
  • ওজন কমে যাওয়া
  • অত্যাধিক ঘাম হওয়া
  • হাড়ে ব্যথা হওয়া
  • ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়া
  • পেশিতে ব্যথা হওয়া
  • বারবার নাক দিয়ে রক্ত পড়া
  • ফোলা লিম্ফ নোড
  • দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত
  • দীর্ঘদিনের জ্বর
  • ত্বকে লাল রেশ দেখা দেওয়া

এই উপসর্গগুলো যদি আপনার শরীরে কিছুদিন যাবত একটানা দেখা দেয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, এবং পরীক্ষা করে যদি রক্তের ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। বেশি দুশ্চিন্তায় ভোগার কারণ নেই, যদি সঠিক চিকিৎসা নেয়া হয় তাহলে ব্লাড ক্যান্সার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url