রাতে আপেল খেলে কি হয় - আপেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

আপেল বিদেশি ফল হওয়া সত্বেও এটি সারা বছর আমাদের দেশে পাওয়া যায়। আপনি কি জানেন রাতে আপেল খেলে কি হয়, এছাড়াও আপনি কি আপেলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানেন? বিদেশি এই ফলটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।এটা আমাদের শরীরের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

রাতে আপেল খেলে কি হয় - আপেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আপেল মূলত তার মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয়। সারা পৃথিবীব্যাপী আপেলের চাষ হয়ে থাকে এবং সবচেয়ে বেশি চাষকৃত প্রজাতি হচ্ছে "জেনাস মালুস"। আপেলের প্রায় ৭৫০০ টির বেশি পরিচিত জাত রয়েছে। রাতে আপেল খেলে কি হয়, তাছাড়াও আপেলের সকল খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচীপত্র ঃ রাতে আপেল খেলে কি হয় - আপেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

আপেল কেন খাবেন 

আপেল বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশের সারা বছর পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটির দামও কম। প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে কি কি উপকার হয়, চলুন সেই সম্পর্কে জানি। 

  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, আপেল খেলেে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩ শতাংশ কমে। কারণ আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনল থাকে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আপেলের মধ্যে ট্রিটারপেনয়েডস নামে একটি উপাদান পেয়েছেন, যেটি লিভার ও কোলোনের মধ্যে ক্যান্সার কোষ বেড়ে উঠতে দেয় না। আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকায় অগ্নাশয় এর ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে। 

  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ প্রতিদিন আপেল খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ২৮ শতাংশ কমে যায়। কারণ আপেলের মধ্যে অধিক পরিমাণ ফাইবার থাকে, তা রক্তের শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে এবং ডায়াবেটিস হতে বাধা দেয়।

  • কোলেস্টেরল কমায়ঃ আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা অন্ত্রের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। ফলের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে। আর শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরিমাণ মতো বা কম থাকায়, হার্টের কোন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। আপেলের খোসার মধ্যে ফেনলিক থাকে, যা রক্তনালি হতে কোলেস্টেরল সরাতে কাজ করে। ফলে হার্টে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। 

রাতে আপেল খেলে কি হয়

আপেল আমাদের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল। এই ফলটি বিদেশি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বাংলাদেশ সর্বদা সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। আপেল তো আমরা সব সময় খেতে পারি, কিন্তু কৌতূহলবশত মনে একটা প্রশ্ন জাগে রাতে আপেল খেলে কি হয়?

আপেল যেহেতু আঁশজনিত খাবার সেহেতু চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন সকালে বা দুপুরে খাওয়ার। কেননা আপেল যদি রাতে খাওয়া হয় তাহলে হজম ও অন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। এক কথায় বলা যায় রাতে আপেল খেলে গ্যাসের সমস্যা হয় এবং পরে অনেকটা সময় ধরে অস্বস্তি বোধ হয়।

আপেল যেহেতু জৈব এসিড সেহেতু এটি পাকস্থলির এসিডকে সাধারণের তুলনায় বাড়িয়ে তোলে এবং অন্ত্রের ক্রিয়ায় সাহায্য করে। তাই রাতে আপেল না খাওয়াই উচিত। যদি অধিক পরিমাণে খেতে মন চায় তাহলে পরিমাণ মতো খাবেন, বেশি খাবেন না।

আপেলের মধ্যে কি কি ভিটামিন আছে 

আপেলে আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট। একটি আপেলের খোসায় ৮.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ২৯.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ থাকে। আপেলের মধ্যে ম্যালিক এসিড পাওয়া যায়। 

আপেল খেলে কি কি ক্ষতি হয়

চিকিৎসকরা একজন ব্যক্তিকে সুস্থ থাকতে প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারন আপেলে রয়েছে ভিটামিন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের মতো পুষ্টি উপাদান। যা অনেক রোগকে দূর করতে সাহায্য করে। আপেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হওয়া সত্ত্বেও, আপনি কি জানেন যে এটি অতিরিক্ত খেলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি করতে পারে। 

বেশি পরিমাণে আপেল খেলে তাতে থাকা কীটনাশক অন্ত্রের নানা সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। এমনকি অন্ত্রের ক্যান্সারের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। পাকস্থলীর ক্ষতি হতে পারে। শরীরে ফাইবারের পরিমাণ বেড়ে গেলে  হজম সংক্রান্ত নানা হতে পারে। ফাইবার অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে পেট ফোলা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আপনি যদি দিনে ৭০ গ্রামের বেশি ফাইবার খান তবে হজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিবে। 

গর্ভবতী মায়ের আপেল খেলে কি হয়

গর্ভকালে প্রতিদিন অন্তত একটি আপেল খেলে বাচ্চার এলার্জি ও অ্যাজমা হওয়ার শঙ্কা কমে যায়। আপেলে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে গর্ভ অবস্থায় হিমোগ্লোবিনের সংকট ঠিক রেখে এমোনিয়া রোধ করে। আপেলে আছে ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও ই এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট। এগুলা হার্টের জন্য ভালো। 

গর্ভ অবস্থায় আপেল খাওয়ার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকার কারণে গর্ভবতী মহিলারা অবাধেই আপেল সেবন করতে পারে। আপেল হলো পুষ্টিকর একটি দুর্দান্ত উৎস এবং হবু মা এবং তার গর্ভস্থ ক্রমবিকাশিত শিশু উভয়ের জন্যই এটি বেশ উচ্চ মাত্রায় উপকারী। গর্ভ অবস্থায় আপেল খেলে কি কি উপকার হয়, চলুন সে সম্পর্কে জানি- 

  • অ্যামোনিয়া প্রতিরোধ করেঃ আপেল হলো আয়রনের একটি ভালো উৎস যা রক্তের হিমোগ্লোবিন উপাদানে এবং অ্যামোনিয়া বা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। যার জন্য গর্ভ অবস্থায় খাদ্য তালিকায় আপেলকে রাখা যায়।
  • হজমে সহায়তাঃ গর্ভাবস্থায় হরমনের পরিবর্তনগুলি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর গতি সম্পন্ন করে তুলতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের দিকে পরিচালিত করতে পারে, কিন্তু আপেল খেলে তা এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। গর্ভাবস্থায় আপনি নিয়মিত এক-দুই টি আপেল খেতে পারেন।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে সহায়তা করেঃ আপেল হলো ভিটামিন-সি এর খুব ভালো একটি উৎস যা রোগের প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
  • শক্তি সরবরাহ করেঃ আপেলের মধ্যে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজের এর মত সাধারন শর্করা গুলি থাকে যা আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি সরবরাহ করতে পারে।
  • হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেঃ আপেল সেবন ধমনির প্রাচীরের মধ্যে খারাপ কোলেস্টরে মাত্রা, জমে যাওয়া এবং প্রদান হ্রাস করতে সহায়তা করে।
  • শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করে
  • হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে

আপেল খেলে কি গ্যাস হয়

বিকালে বা রাতে আপেল খাওয়া হলে তা হজম ও অন্ত্রের কাজে বাঘাত ঘটায়। রাতে আপেল খাওয়া হলে গ্যাসের সমস্যা হয় এবং পরে অনেকটা সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে। আপেলের জৈব এসিড পাকস্থলীর এসিডকে সাধারণের তুলনায় বাড়িয়ে দেয় এবং তা অন্ত্রের ক্রিয়ায় সাহায্য করে। 

আপেল সিদ্ধ খেলে কি হয়

যখন শিশুরা ৬ মাস পর দুধ বাদ দিয়ে প্রথম খাবার খেতে শেখে তখন তাদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয়। কারণ তাদের পরিপাকতন্ত্র কিছুটা সময় নেয়, এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে। এই সময়ে শিশুকে আপেল সেদ্ধ খাওয়ানো যাবে। কারণ আপেল হজমে সহায়তা করে, বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা ঠিক রাখতে সেদ্ধ আপেল খাওয়ানো যাবে।

লাল আপেল এবং সবুজ আপেলের উপকারিতা

টেকটিন, কোয়ারেকটিন ও ফ্ল্যাভোনয়েড  এই অ্যান্টি-অক্সাইড গুলো  লাল আপেলে পাওয়া যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের কোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষের অক্সিডেশন বা জারণ প্রক্রিয়া হতে দেই না। 

সবুজ আপেল লিভারের জন্য খুবই উপকারী। সবুজ আপেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডিটক্সিফাইং এজেন্ট যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং একই সঙ্গে লিভারকে হেপাটিক অবস্থা থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন একটি করে সবুজ আপেল খেলে লিভারের কার্যকারিতা ঠিক থাকে। তাই নিয়মিত আপনি একটি করে সবুজ আপেল খেতে পারেন। 

আপেল খাওয়ার নিয়ম

আপেলের জৈব এসিড পাকস্থলির এসিডকে সাধারণের তুলনায় বাড়িয়ে তোলে এবং অন্ত্রের ক্রিয়ায়  সাহায্য করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা দুপুরে খাবারের আগে নাস্তা হিসেবে আপেল খেলে বেশি উপকার হয়। যা ওজন কমাতে, ত্বক ভালো রাখতে, হজম ক্রিয়া বাড়াতে এবং দীর্ঘ সময় শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

পুষ্টিবিজ্ঞানের রীতিতে সকালবেলা আপেল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। আপেলের খোসা, আঁশ ও পেকটিন সমৃদ্ধ। অনেকেরই অপর্যাপ্ত ঘুম, দেরিতে ঘুম ইত্যাদির কারণে হজমের নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে আপেল খাওয়া সবচেয়ে ভালো। অন্যান্য ফলের তুলনায় সকালে আপেল খাওয়া অন্ত্রের ক্রিয়া সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

বিকেল বা রাতে আপেল খাওয়া হলে তা হজম ও অন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। অর্থ- রাতে আপেল খাওয়া হলে গ্যাসের সমস্যা হয় এবং পরে অনেকটা সময় অস্থিতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। এজন্য বিকেলে আপেল খাওয়া উচিত নয়।

আলেকজান্ডার দি গ্রেট সর্বপ্রথম ৩২৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কাজাখস্তানে খাটো প্রজাতির আপেল খুঁজে পান। যেসব তিনি মেসিডোনিয়তে নিয়ে যান। হাজার বছর ধরে এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে আপেল কে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন আপেলের উপকারিতা-অপকারিতা এবং এটি কখন, কি পরিমানে খেতে হয়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url