গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর লক্ষণ - গর্ভাঅবস্থায় ডায়াবেটিকস কমানোর উপায়

গর্ভকালীন সময় হচ্ছে প্রতিটি মায়ের জন্য একটি সেনসিটিভ সময়। এই সময়ে শরীরের যত্ন অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাই গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো বেশি করে খেয়াল করতে হবে। আর যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে গর্ভাঅবস্থায় ডায়াবেটিকস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। 

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর লক্ষণ - গর্ভাঅবস্থায় ডায়াবেটিকস কমানোর উপায়

গর্ভ অবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ এবং গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে জানা প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও গর্ব অবস্থায় আরো কিছু বিষয়ে জানা উচিত যেমন- গর্ব অবস্থায় ডায়াবেটিস কেন হয়, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত থাকা উচিত, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়। এ সকল বিষয়গুলো জানতে আজকের এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচীপত্র

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

গর্ভকালীন সময়ে নিজের শরীরের যত্ন একটু অন্য সময়ের থেকে বেশি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কেননা গর্ভ অবস্থায় মায়েদের শরীর খুবই সেনসিটিভ থাকে। যদি একটু অযত্ন হয় তাহলে বাচ্চার তো সমস্যা হবে সেই সঙ্গে মায়েরও অনেক বড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে। তাই এই সময় একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয়।

এখন আমাদের মাঝে, আমরা অনেকে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত, বা গর্ব অবস্থায় ডায়াবেটিস হচ্ছে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি। কেননা গর্ব অবস্থায় আমাদের খাওয়া-দাওয়ার লেভেল হাই করে দিতে হয়। বাচ্চার সুস্থতার জন্য এবং মায়ের সুস্থতার জন্য বিভিন্ন ধরনের গ্লুকোজ খেতে হয়। সেই জন্য মনে সংশয় জাগে যে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা।

প্রেগনেন্সির সময় বা গর্ভ অবস্থায় যে ডায়াবেটিস বিকাশিত হয় তাকে জেষ্টেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়। প্রেগনেন্সির সময় শরীরের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে যার ফলে শরীরে জেষ্টেশনাল ডাইবেটিস হয়ে থাকে। শুধুমাত্র ডায়াবেটিসের লক্ষণ দিয়ে গর্ব অবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্ত করা অনেকটা কঠিন। কেননা এটি গর্ভকালীন সময়ের লক্ষণও হতে পারে।

এরপরেও গর্ব অবস্থায় যদি কিছু লক্ষণ একত্রে দেখা দেয় তাহলে এটা ধারণা করতে পারেন যে ডায়াবেটিস হয়েছে, তখন দেরি না করে দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই গর্ভ অবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো কি-

  • অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা অনুভব হবে
  • ঘন ঘন পিপাসা লাগবে
  • স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন ঘন প্রস্রাব হবে
  • শরীরে অধিক ক্লান্ত বোধ হবে
  • অল্পতেই মুখ শুকিয়ে যাবে
  • ওজন কমে যাবে
  • দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা দেখাবে
  • নতুন করে নাক ডাকার স্বভাব তৈরি হবে

এই লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়ার মানে এই না যে আপনার গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছে। কিছু লক্ষণ স্বাভাবিকভাবে গর্ভাবস্থায় দেখা যায়। তবে আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হচ্ছে তাহলে অবশ্যই ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কেন হয়

সাধারণভাবে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা যদি হ্রাস পায় তাহলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।আর গর্ভকালীন অবস্থায় যে ডায়াবেটিস বিকাসিত হয় তাকে জেষ্টেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়। এই ডায়াবেটিসও ঠিক একই ভাবে হয় রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা যদি কমে যায় তাহলে এই ডায়বেটিসের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে গর্ভকালীন অবস্থায় যে কারণে ডায়াবেটিস হয় তাহলো-

  • যদি শারীরিক ওজন বেশি থাকে
  • বয়স যদি ২৫ এর বেশি হয়
  • পরিবারের কারো যদি ডায়াবেটিস থাকে
  • যদি সারাদিন কোন রকমের কাজ কাম না করে বসে থাকা হয়, তাহলে হতে পারে
  • কিছু কিছু অসুখ যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, পলিসিস্টিক ওভারি, কোলেস্টেরল এগুলো যাদের আছে তাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • যদি এমন হয় প্রথমবার গর্ভ অবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল পরবর্তীতে সেটি ভালো হয়েছে এবং আবার পরবর্তী গর্ভধারণের সময়ে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি সবথেকে বেশি থাকে
  • প্রথমবার গর্ভধারণ করে গর্ভ প্রসবের সময় বাচ্চার ওজন যদি চার কেজির বেশি হয় তাহলে পরবর্তী সময়ে গর্ভধারণের সময় ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে
  • আবার অনেকের শরীরে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা আগে থেকেই থাকে, তাদের গর্ভধারণের সময় ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

গর্ভাঅবস্থায় ডায়াবেটিস কত থাকা উচিত

আপনারা ইতিমধ্যে উপরে জেনে গেছেন যে গর্ভ অবস্থায় ডায়াবেটিস কেন হয় এবং গর্ব অবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার লক্ষণ গুলো কি। ডায়াবেটিস যে শুধু গর্ব অবস্থায় হয় তা কিন্তু মোটেও নয়। আবার যে সবার ক্ষেত্রে গর্ভ অবস্থায় ডায়াবেটিস হবে এমনটাও নয়।

তবে যারা আগে থেকে ডায়াবেটিসে ভোগেন, গর্ব অবস্থায় তাদের ডায়াবেটিস কত থাকা উচিত তা নিশ্চয়ই জানতে হবে। কেননা ডায়াবেটিস মারাত্মক রোগ এটা শরীরকে একদম দুর্বল করে দেয়। তাই জানতে হবে গর্ব অবস্থায় ডায়াবেটিস কত থাকা স্বাভাবিক আর কত থাকা মারাত্মক ক্ষতিকর।

গর্ভাবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩০০ mg/dl এর বেশি হলে তা রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।এছাড়াও HBAC এর পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় ৬.৫ বা তার বেশি হয় তাহলে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ যদি ১৬.৭ মিলিমোল বা বেশি হয় তাহলে এই মাত্রা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদ সংকেত।

অর্থাৎ একজন স্বাভাবিক গর্ভবতী মায়ের জন্য ডায়াবেটিস এর পরিমাণ উপরে বর্ণিত এই পরিমাণের কম থাকতে হবে তাহলে সেটি মায়ের জন্য এবং সন্তানের জন্য ভালো হবে। এর থেকে যদি বেশি হয় তাহলে সেটি মা এবং ছেলে উভয়ের জন্য বিপজ্জনক।

গর্ভাঅবস্থায় ডায়াবেটিকস কমানোর উপায়

গর্ব অবস্থায় প্রতিটি মায়ের শরীরের একটু বেশিই যত্ন নিতে হয়। কেননা যদি এই সময়ে একটু অনিয়ম হয় তাহলেই মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য মারাত্মক রকমের ক্ষতি হতে পারে। তাই বেশি বেশি যত্ন নিতে হয়। আর রক্ত যদি শরীরের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে সেটি হয় ডায়াবেটিস।

আপনারা তো ইতিপূর্বে সবকিছু জেনে গেছেন যে কিভাবে গর্ব অবস্থায় ডায়াবেটিস হয় বা গর্ব অবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো কি, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত থাকা উচিত এসব বিষয় আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। এখন জানা প্রয়োজন গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি? তাহলে জেনে নিন গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায়-

  • যদি আপনি গর্বধারনের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে তার আগে ডাক্তারের সঙ্গে একবার পরামর্শ নিবেন এবং চেক করবেন যে আপনার ডায়াবেটিস আছে কিনা। এতে করে আপনি এ ডাইবেটিস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন এবং গর্ভধারণের সময় আপনার কোন রকমের সমস্যা হবে না।
  • স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণ করার একটি উত্তম উপায় হল ওজন স্বাভাবিক রেখে গর্ভধারণ করা। আপনি যদি গর্ভধারণের চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে তার আগে আপনি আপনার নিজের শরীরের ওজন কিছুটা হলেও কমিয়ে নিবেন এতে করে আপনার গর্ভধারণ স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং সেটি স্বাস্থ্যকর হবে।
  • গর্ভধারণ করার পূর্বে বা গর্ভ ধারণের পর প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাবেন। শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। শাকসবজি আপনার শরীরকে আসে পূর্ণ করবে এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়তা করবে। এজন্য গর্ভধারণের পূর্বে বা গর্ভধারণের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি খাবেন।
  • গর্ভ অবস্থায় দেহের আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। পানি পান করবেন এর মানে এ-নয় যে কোমল পানীয় পান করবেন। সোডা, জুস, স্পোর্টস ড্রিংক, কফি, অধিক মিষ্টি যুক্ত চা এসব কিছু বর্জন করতে হবে।
  • রাতে খাবারের সময় অবশ্যই হিসাব রাখবেন যে কি পরিমান কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতেছেন। একটা জিনিস ভালো লাগতেছে বলে সেটা অধিক পরিমাণে খাবেন তা করবেন না। যে খাবারটি আপনি খেতে পারতেছেন সেটি যে বেশি পরিমাণ খাবেন তা করবেন না সেটি কম পরিমাণে নেবেন। যেমন একটি পুরো শসার পরিবর্তে শুধুমাত্র দুই পিস সালাত নিবেন।
  • বর্তমান সময় তো প্রযুক্তির যুগ এখন তো সকলের হাতে এন্ড্রয়েড ফোন রয়েছে। আপনি চাইলে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ইউজ করে আপনার শরীরে সুগারের মাত্রা, কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তাই খাবারের পাশাপাশি প্রযুক্তিও ব্যবহার করবেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অনেক অ্যাপস রয়েছে যে এপস গুলোর সাহায্যে শরীরের সুগার ও কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ আছে কিনা তা চেক করা যায়।

এই সকল উপায় গুলো অবলম্বন করে আপনি আপনার শরীরকে ঠিক রাখতে পারবেন এবং একজন আদর্শ গর্ভবতী মা হতে পারবেন। গর্ব অবস্থায় নিজের শরীরের সর্বাধিক যত্ন নিবেন। নিজেকে সুস্থ রাখবেন এবং বাচ্চাকে ও সুস্থ রাখবেন। আপনি নিজে তো এই সকল নিয়ম গুলি মেনে চলবেন এবং অন্য কেউ মানার জন্য আদেশ দিবেন।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিকস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয়

গর্ভকালীন সময়ে মায়ের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী হলে তা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes Mellitus/GDM) হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ, সকালে খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১ মিলিমোল/লিটার বা তার চেয়ে বেশী এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭.৮ মিলিমোল/লিটার বা তার চেয়ে বেশী হলে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে সনাক্ত করতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় Oral Glucose Tolerance Test বা OGTT।

এছাড়াও আরো একটি পরীক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে Glucose Challenge Test বা GCT। দিনের যে কোনও সময় ৫০ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ১ ঘণ্টা পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭.৮ মিলিমোল/লিটার বা তার চেয়ে বেশী হলে তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে ধরে নিতে হবে। GCT পজিটিভ হলে অবশ্যই OGTT পরীক্ষা করাতে হবে। গড়ে সাধারণত ৪% গর্ভবতী মায়েরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে ডায়াবেটিস শনাক্তকারী পরীক্ষা ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট বা OGTT করে ডায়াবেটিস আছে কিনা তা শনাক্ত করতে হবে। এই পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীতে গর্ভকালীন ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে আবার একই পরীক্ষা করে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের উপস্থিতি আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।

আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে গর্ব অবস্থায় আপনার ডায়াবেটিস কত বেশি হলে আপনাকে ইনসুলিন নিতে হবে। গর্ব অবস্থায় যদি ডায়াবেটিস চেক করার পরে দেখা যায় যে ৭.৮ মিলিমোল/লিটার হয় তাহলে অবশ্যই ইনসুলিন নিতে হবে। গর্ব অবস্থায় সকলে নিজের শরীরের অধিক পরিমাণ যত্ন নিবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url