খাসি কুরবানী করা কি জায়েজ - কোরবানি কয় নামে দেওয়া যায়
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু উৎসর্গ বা জবাহ দেওয়াকে কোরবানি বলা হয়। কোরবানি ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। যে ব্যক্তি সমর্থ্যবান তার জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব।অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে খাসি কোরবানি করা কি জায়েজ, তাছাড়াও অনেকে জানতে চান কোরবানি কয় নামে দেওয়া যায়।
এই বিষয়গুলো সহ কোরবানি সংক্রান্ত আরো গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয় নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। যেমন কোরবানির ফরজ কয়টি থেকে শুরু করে নিয়ে কুরবানী দেওয়ার যোগ্যতা কি এবং ঋণগ্রস্ত থাকা অবস্থায় কি কুরবানী দেওয়া যায়। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে আজকের এই পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কুরবানির ফরজ কয়টি
কুরবানীর ফরজ কয়টি বা কোরবানি ফরজ কিনা সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য বা মাসলা-মাসায়েল আলেম ওয়ালাদের মধ্যে দেওয়া হয়নি। আলেম-ওলামা একরাম দের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে কোরবানি কি সুন্নাহ নাকি ওয়াজিব এই বিষয়ে সম্পর্কে। কোন আলেমই কুরবানী ফরজ কিনা এই বিষয়ে কোন মতবিরোধ করেননি।
একদল ওলামায়ে কেরামগণ বলেছেন এটি সুন্নত, সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অধিকাংশ আলেমদের বক্তব্য এটাই। আরেকদল আলেমগণ বলেছেন কোরবানি ওয়াজিব। তিন থেকে চারজন ওলামায়ে কেরামগণ ছাড়া আর কেউ কোরবানি কে ওয়াজিব বলেননি। শরীয়তে যেসব ব্যক্তিদের ওপর কোরবানি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তারা হচ্ছেন প্রথমত মুসলিম হওয়া, বিবেক সম্পন্ন হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, সুস্থ মস্তিষ্কের হওয়া।
অর্থাৎ যিনি কুরবানী করবেন শরীয়ত মোতাবেক তার মধ্যে এই গুণগুলো থাকতে হবে। এর সাথে আরও একটি বিশেষ গুণ থাকা দরকার সেটি হচ্ছে ঐ ব্যক্তিকে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে অর্থাৎ পশু জবাই করার বা কোরবানি করার সমর্থ্য থাকতে হবে। যে ব্যক্তির মধ্যে এই গুণ গুলো থাকবে তার জন্য কোরবানি আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
এক্ষেত্রে আবার যারা ওয়াজিব বলেছেন, তারা দুটি কঠিন শর্ত দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, যে ব্যক্তি কুরবানী করবেন ওই ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। অর্থাৎ যেই সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ হয়।আরেকটি হচ্ছে তাকে মুসাফির হওয়া যাবে না। এই দুটি শর্তকে বেশি জোর দিয়ে বলা হয়েছে কোরবানি ওয়াজিব।
এই দুটি শর্ত থেকে কেউ যদি একটি বাদ দেয় বা পূরণ করতে না পারে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হাদিস দিয়ে ওয়াজিবের দলিল দিয়েছেন সেইটি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সমর্থ্য রাখে সে যেন কোরবানি করে'। অর্থাৎ যে ব্যক্তির সমর্থ্য রয়েছে তাকে কোরবানি দিতে হবে।
অন্য এক রেওয়াতের মধ্যে এসেছে, যে ব্যক্তির সমর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করলো না, সে ব্যক্তি যেন ঈদগাহে না আসে।' এই হাদিস দিয়েই ওয়াজিবের দলিল দেওয়া হয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই স্পষ্ট ভাবে নেসাব পরিমাণ সম্পদের কথা মোটেও বলেননি, এটা না থাকলেও চলবে, যদি সেই ব্যক্তি কুরবানী করতে চান।
৭ ভাগে কুরবানীর দলিল
মুক্বীম অবস্থায় ভাগে কোরবানি করার কোন সঠিক বিধান বা দলিল নেই। একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কোরবানি করায় যথেষ্ট। তবে যদি সমর্থ্য থাকে তাহলে একাধিক পশুও কোরবানি করা যায়। সফর অবস্থায় ভাগা কোরবানি করার সম্পর্কে ছহীহ দলিল রয়েছে। ভাগা কোরবানি করা সম্পর্কে যে হাদিসগুলো পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা কালো দুম্বা আনতে বললেন, অতঃপর দোয়া পাঠ করলেন- বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মাদিন। অতঃপর উক্ত দুম্বাটি কুরবানী করলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে জনমন্ডলী! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’ (সনদ ছহীহ, ছহীহ তিরমিযী হা/১২২৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪২১।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যাওয়ার পরেও তার সুন্নত অনুযায়ী সাহাবী গণের মধ্যে প্রত্যক পরিবারের পক্ষ থেকে একটা করে কুরবানী করার প্রচলন ছিল। যেমন আতা ইবনু ইয়াসির ছাহাবী আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ)-কে রাসূলের যুগে কেমনভাবে কুরবানী করা হ’ত মর্মে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হ’তে কুরবানী দিত। অতঃপর তা নিজে খেত ও অন্যকে খাওয়াত (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৬ ‘কুরবানী’ অধ্যায়।
সফরে থাকাকালীন সময়ে যদি ঈদুল আযহা উপস্থিত হয় তাহলে একটি পশুতে একে ওপরের শরিক হয়ে ভাগে কোরবানি করা যায়। অর্থাৎ মুসাফির অবস্থায় ভাগে কোরবানি করা যায়। যেমন-
জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জের সফরে ছিলাম। তখন সাত জনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং সাত জনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছিলাম (ছহীহ মুসলিম ২/৯৫৫ পৃঃ)।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হ’ল। তখন আমরা সাত জন একটি গরুতে ও দশ জন একটি উটে শরীক হ’লাম (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৪; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩১২৮, ছহীহ নাসাঈ হা/৪০৯০;।
জাবির (রাঃ) বলেন, হুদায়বিয়ার সফরে আমরা রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। তখন একটি গরুতে সাত জন ও একটি উটে সাত শরীক হয়ে কুরবানী করেছিলাম (ছহীহ মুসলিম হা/১৩১৮ ‘হজ্জ’ অধ্যায়; ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪৩৫।
কোরবানি দেওয়ার যোগ্যতা
কোরবানি করা মুসলিম উম্মার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি ইসলামের প্রতিকি বিধান বলির মধ্যে অন্যতম একটি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম প্রতিবছর কুরবানী করতেন। যাদের ওপর যাকাত ওয়াজিব, তাদের ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব। মূলত কোরবানি দেওয়ার জন্য একটি ব্যক্তির মাঝে বিশেষ কিছু যোগ্যতা থাকা দরকার।
যে ব্যক্তি কোরবানি করবে সেই ব্যক্তির মাঝে কোরবানি দেওয়ার যে যোগ্যতা গুলো থাকা দরকার সেগুলো হল-
- মুসলিম হওয়া - কোরবানি ওয়াজিব হতে হলে প্রথমত মুসলিম হতে হবে। অমুসলিমদের ওপর কোরবানি কখনোই ওয়াজিব হয় না। তাই কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার প্রথম সত্য মুসলিম হওয়া।
- প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া - যে ব্যক্তি কোরবানি করবেন তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। অর্থাৎ ভালো মন্দ বিচার করার জ্ঞান থাকতে হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৫ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৯ বছর বয়স হতে হবে।
- সুস্থ মস্তিষ্ক এবং জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া - যে ব্যক্তি কোরবানি করবেন তাকে সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হবে। কেননা একজন উম্মাদের কোরবানি কখনোই কবুল হবে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সুস্থ মস্তিষ্কের এবং জ্ঞান সম্পন্ন তার ক্ষেত্রে কোরবানি ওয়াজিব হবে।
- নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া - যে ব্যক্তি কোরবানি করবেন তাকে অন্ততপক্ষে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে। নেসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে বুঝায় সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা এর সমমূল্য সম্পদ বা অর্থ।
এই গুণগুলো যে ব্যক্তির মাঝে থাকবে তার ক্ষেত্রে কোরবানি করা ওয়াজিব। এই চারটি বিষয়ে এখানে শুধু সংক্ষিপ্ত আকারে বলা হয়েছে। এ চারটি বিষয়ের উপর তাফসীরে অনেক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তবে প্রধান ভাবে এই চারটি গুণ একটি ব্যক্তির মাঝে থাকলেই সে কোরবানি করতে পারবে। আর এই গুণগুলো যে ব্যক্তির মাঝে থাকবে তার ক্ষেত্রে কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।
ঋণ থাকলে কি কোরবানি হয়
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কোরবানির দিনগুলোতে সাময়িক ঋণগ্রস্ত থাকে, যা পরিশোধ করে দিলে তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকবে না, তাহলে ওই ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। আর যদি ঋণ আদায় করে দিলেও নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২)
নেসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে যা বোঝায় তা হল- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র-এ সবই কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয় তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও কোরবানি করা ওয়াজিব হবে।
তাই কারো কাছে যদি এতো সম্পদ থাকে যে, ঋণ আদায় করার পরও নেসাব পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজন অতিরিক্ত অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তার উপর কোরবানি আবশ্যক হবে। আর যদি এতোটুকু সম্পদ না থাকে,তাহলে কোরবানি আবশ্যক হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬)। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে ঋণ থাকাকালীন অবস্থায় কোরবানি হবে না।
কোরবানি কাদের উপর ফরজ
পবিত্র জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকে মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু জবাই করে ত্যাগ স্বীকার করার নামই কোরবানি। এটি ইসলামের বিধানাবলির অন্যতম একটি ইবাদত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবছর কোরবানি করতেন। যাদের ওপর জাকাত ওয়াজিব, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী, যে কোরবানির দিনগুলোতে সাড়ে সাত ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা ওই পরিমাণ রুপার সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্রের মালিক হবে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৬৫)
অর্থাৎ কোরবানি ফরজ বা ওয়াজিব হওয়ার জন্য একটি ব্যক্তির মাঝে যে সব গুণাবলী বিশেষভাবে থাকা প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে-
- মুসলিম হওয়া
- প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া
- সুস্থ মস্তিষ্ক এবং জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া
- নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া
- যাকাত ওয়াজিব হওয়া
- ঋণগ্রস্ত না হওয়া
- কুরবানী আদায়ের সক্ষম হওয়া
কুরবানী দেওয়ার সঠিক নিয়ম
কোরবানি মূলত মোট তিন দিন করা যায়। জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে জিলহজের ১০ তারিখেই কোরবানি করা উত্তম। (মুয়াত্তা মালেক : ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/২৯৫) যেসব এলাকার লোকদের ওপর জুম্মা ও ঈদের নামাজ ওয়াজিব, তাদের জন্য ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা জায়েজ নয়।
এক্ষেত্রে আবার যদি বৃষ্টি বাদল বা অন্য কোন ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামাজ না হয়, তাহলে ঈদের নামাজের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কোরবানি করা জায়েজ। (বুখারি : ২/৮৩২, ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩১৮)
কুরবানী করার ক্ষেত্রে একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কোরবানি দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কোরবানি করলে কারোটাই শুদ্ধ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। হাতের অধিক শরিক হলে কারো কোরবানি শুদ্ধ হবে না। সহিহ মুসলিম : ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক : ১/৩১৯, কাজিখান : ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৭-২০৮)
আবার সাত শরিকে কোরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক-সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন—কারো আধাভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানিই শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৭) এসব প্রাণীর মধ্যে সাত ভাগেই কোরবানি করা জরুরি নয়, সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন—দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করাও জায়েজ। (মুসলিম, হাদিস : ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৭)
খাসি কুরবানী করা কি জায়েজ
হাজার বছর ধরে কুরবানীর দেওয়ার জন্য পশু হিসেবে খাসি বিবেচনা করা হয়। এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে অনেকে প্রশ্ন করতেছেন খাসি কুরবানী করা কি জায়েজ। আর এই বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন আলেম-ওলামাগণ বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য পেশ করতেছেন।
হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা শাহ্ আশরাফ আলী র. এর ‘ইমদাদুল ফাতাওয়া’ তৃতীয় খন্ডে একই বিষয়ে পর পর তিনটি প্রশ্নের জবাবে হযরত থানভী র. যা বলছেন- “ সর্ব প্রকার খাসী জন্তু কুরবানী করা জায়েয” : যে তিনভাবে বা প্রক্রিয়ায় খাসী করার কথা আপনি লিখেছেন, তিনটিই জায়েয।
“খাসী জন্তুর কুরবানী বৈধ, চাই তার অঙ্গটি চিরে বের করে ফেলা হোক; অথবা যথাস্থানে রেখেই পিষে দেয়া হোক”। “হৃষ্টপুষ্ট করার জন্যে জন্তুটিকে খাসী বানিয়ে দিলে, এটিকে দোষরূপে গণ্য করা হয় না এবং তেমন জন্তুর কুরবানীও জায়েয হয়ে থাকে”।
কোরবানি কয় নামে দেওয়া যায়
কারণ আমি কোরবানি দেওয়ার বিষয়টি ইসলামের শরীয়ত সম্মতি নয়। কেননা কোরবানি হবে শুধুমাত্র আল্লাহর নামে। আর যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি হচ্ছে সেই ব্যাক্তির নাম তো কোরবানির সেই পশু কেনার সময়ই অংশীদার হিসাবে লেখা হয়ে থাকে। এজন্য জবের সময় অন্য কোন নাম বলা যাবে না।
পশু জবাইয়ের সময় কোরবানিদাতাদের নাম উল্লেখ করাও সুন্নত নয়। কেননা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির পশু জবাই করার সময় কার পক্ষ থেকে কোরবানি হচ্ছে তার নাম মুখে উল্লেখ করেননি। তিনি কোরবানির পশু জবাই করার সময় মুখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলেছেন।
তবে কুরবানির আগে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নামগুলো পাঠ করা যেতে পারে, তবে এটি জরুরি বা সুন্নত হিসেবে নয়। এভাবে উল্লেখ করলেও হবে যে, আমরা অমুক বলছি, আমাদের কোরবানি কবুল করুন, অথবা সবার তরফ থেকে কোরবানি কবুল করুন। (সহীহ বুখারী-৫৫৫৮, সহীহ মুসলিম -১৯৬৬)
৬ ভাগে কুরবানী দেওয়া যাবে কি
হ্যাঁ, ছয় ভাগে কোরবানি দেওয়া যাবে। তবে এটি খাসি, দুম্বা, ভেড়া এই পশুগুলোর ক্ষেত্রে নয়। যদি ছয় জনে ভাগ দিতে হয় অর্থাৎ যদি ৬ ভাগা কোরবানি করতে হয় তাহলে গরু, উট কিংবা মহিষের ক্ষেত্রে দিতে হবে। কুরবানী করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কুরবানী করার সঠিক নিয়ম পড়লে আপনি জানতে পারবেন যে ৬ ভাগে কুরবানী করা যাবে কিনা। এখানে প্রত্যেকটি হাদিসের দলিল সহকারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url