ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয় - ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়

ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালীতে ইনফেকশন হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। বিশেষ করে মহিলা ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয় সে বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এছাড়াও ইউরিন ইনফেকশন থেকে কিভাবে বাঁচা যায় বা মুক্তি পাওয়া যায় সে বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে। 

ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয় - ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়

ইউরিন ইনফেকশন হলে যেহেতু নানা ধরনের সমস্যা হয় সেহেতু ইউরিন ইনফেকশন থেকে কিভাবে বাঁচা যায় সেই সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন। অর্থাৎ ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় এবং ইউরিন ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা কি সেই সম্পর্কে জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ সকল বিষয়গুলো নিয়েই আজকের আমাদের আলোচনার মূল বিষয়। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয়

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ইউরেন ইনফেকশন একটি খুবই পরিচিত সমস্যা। নারী-পুরুষ ও ছোট বড় সব বয়সেরই এই রোগটি দেখা দিয়ে থাকে। আমাদের দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য প্রস্রাব হয়ে বেরিয়ে যায়। প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়ার ওই ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত অংক গুলো নিয়ে আমাদের শরীরের মূত্রতন্ত্র গঠিত। মূত্র তন্ত্রের মধ্যে রয়েছে দুইটি ইউরেটার দুইটি কিডনি ও একটি মুত্রথলি বা মূত্রনালী।

মুত্রনালী যেকোন অংশে জীবাণু সংক্রমণ হলে সেটিকে ইউরিন ইনফেকশন বা প্রস্রাব সংক্রমণ বলে থাকে। ইউরিন ইনফেকশন হলে যে সমস্যা গুলো দেখা দেয়-

  • কোমরে ব্যথা দেখা দেওয়া
  • রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  • প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়া
  • প্রস্রাব এর রাস্তা দিয়ে রক্ত যাওয়া
  • জি ঘাটা বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
  • প্রস্রাবের রং হলুদ ও লালচে ধরনের হওয়া
  • পানি খেলেই প্রস্রাব হবে এমন মনে হওয়া
  • প্রস্রাব হওয়ার সময় আটকাতে আটকাতে হয়ে যাওয়া
  • কিডনির দুই পাশে ও তলপেটে অতিমাত্রায় ব্যথা হওয়া
  • প্রস্রাব শেষে অস্বাভাবিকভাবে ফোটা ফোটা প্রস্রাব হওয়া
  • প্রতিনিয়ত প্রস্রাব করার সময় চুলকানি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভব করা
  • অস্বাভাবিকভাবে সারাক্ষণ জ্বর জ্বর ভাব ও সন্ধ্যার পর হাঁপানি হয়ে জ্বর আসা

ইউরিন ইনফেকশন হলে করণীয়

ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রথম প্রথম মনে হবে পানি খেলে প্রস্রাব হবে, কিন্তু পানি খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। একটু পর পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হলে তখন এন্টিবায়োটিক না খাওয়া, ইউরিন ইনফেকশন এটি একটি অতি সাধারণ একটি সমস্যা। কিন্তু সঠিক সময়ে এটির চিকিৎসা করা না হলে এটি পরবর্তী সময়ে একটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। 

ইউরিন ইনফেকশন অধিক তরে ছেলের থেকে মেয়ের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যাটি শিশুদের ও হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুতর সমস্যা। সঠিক সময়ে এটি চিকিৎসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের বেশি পরিমাণ ঘন ঘন পানি খাওয়ান ফলে বাচ্চাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হবে। তার মধ্য দিয়ে বিষাক্ত পদার্থ গুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে, ইউরিন ইনফেকশন হলে যা করণীয়-

  • দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে না রেখে টাইম মতো করা।
  • যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা তাদের ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • পরিবেশের বৃদ্ধি তাপমাত্রা অনুযায়ী সাথে সাথে প্রচুর তরল পানি খাওয়া।
  • গোপনাঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও প্রস্রাবের পর অবশ্যই গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে।
  • এই অবস্থায় প্রতিনিয়ত প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা। তাছাড়াও ফলের রস, ডাবের পানি, কম মসলা দেওয়া ঝোলের তরকারি ও সুপ খেয়ে কমাতে পারি পানি শূন্যতা।
  • অতিরিক্ত গরমে প্রতিনিয়ত রোগ প্রতিরোধশক্তি বৃদ্ধি করতে আমরা নিয়মিত পুষ্টিকর শাকসবজি ও মৌসুমী ফল খেতে পারি এবং বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
  • পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করা নিয়মিত গোসল করা ও টয়লেট শেষে ভালো ভাবে পরিষ্কার হওয়া টয়লেটের প্যান মেঝে কমোড নিয়মিত ঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • এই অতিরিক্ত গরমে অন্ততপক্ষে সপ্তাহে একদিন হলেও গোসলের সময় পানিতে কয়েক ফোটা ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার করা।

ইউরিন ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা

ইউরিন ইনফেকশন ছোট বড় সবাই এই রোগে ভোগেন। বিশেষ করে গরমে এ সমস্যাটা বেশি দেখা দিয়ে থাকে। এর বেশিরভাগ কারণই হচ্ছে পানি শূন্যতা, অতিরিক্ত গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে সব পানি বেরিয়ে যায়। তারপর যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া না যায়, তাহলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া এটি স্বাভাবিক। আর এইগুলার কারণে বেড়ে যায় প্রস্রাব সংক্রামন বা ইউরিন ইনফেকশন।

আর এই ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালী তে সংক্রমণ আচমকা হানা দিয়ে থাকেন। এই চিকিৎসা যদি সঠিক সময় করা না হয়, তাহলে এই সংক্রমণ কিডনিতে সরিয়ে যেতে পারে। যার পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। অনেকেই এই সমস্যায় পড়লে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাকের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের বাজার চলিত কিছু ওষুধ খেয়ে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য একদমই উপযোগী নয়। এটি খাওয়ার ফলে ওষুধের সাইড ইফেক্ট করে, আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।

ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে আমাদের অবশ্যই পানি খাওয়ার দিকে সচেতন থাকতে হবে। প্রস্রাবের বেশি হলুদ ভাব দেখা দিলে, দেরি না করে দিনে অন্তত আড়াই লিটার পানি পান করতেই হবে। প্রতিটা মানুষের সাধারণত প্রতি চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর পর প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তার থেকে যদি বেশি দেরি হয় তাহলে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। খুব বেশি প্রস্রাব চেপে রাখবেন না, এতে সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে।

ইউরিন ইনফেকশন হলে বেশিরভাগ সময় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। ইউরিন ইনফেকশন হলে বেশিরভাগ চিকিৎসক খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার তালিকায় রাখতে বলে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে অনেকটা সাহায্য করে। 

এছাড়াও ভিটামিন সি শরীরের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সাহায্য করে। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে বেশিরভাগ সময় খাদ্যের তালিকায় কমলালেবু, বাতাবি লেবু, পেঁপে, স্ট্রবেরি অবশ্যই থাকা উচিত।ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে পারি প্রোবায়োটিক প্রকারের খাবার খেলে আমরা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারি।

ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়

শীতকালের আমাদের সাধারণত বেশি পানি পানে অনাগ্রহ দেখা দিয়ে থাকে। তাই হয়তো এই মৌসুমে ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালী সংক্রমণ বেশি দেখা দিয়ে থাকে। অনেকে আবার প্রতিবছরই এই ইউরিন ইনফেকশন সমস্যায় ভুগে থাকে। অনেক সময় ধরে এই সমস্যাটি থাকলে কিডনি অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার শারীরিকভাবেও নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেই ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় গুলো কি কি- 

  • গবেষণা থেকে জানা যায়, বেকিং সোডা দ্রুত মূত্রনালির সংক্রমণ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এজন্য আধা চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস পানিতে ভালো করে মিশিয়ে দিনে এক বার খেলেই প্রস্রাবের জ্বালা বা ব্যথা কমে যেতে পারে। তবে বেশি মাত্রায় বেকিং সোডা শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
  • প্রস্রাবে হলুদ ভাব দেখা দিলে দেরি না করে দিনে অন্তত আড়াই লিটার পানি খেতে হবে। সাধারণত প্রতি ৪-৫ ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব হওয়া উচিত।
  • অবশ্যই খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি রাখবেন। এতে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমবে। এছাড়া ভিটামিন সি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  • ইউটিআইয়ে আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত ব্রোমেলাইন সমৃদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে প্রতিদিন আনারসের রসও খাওয়া যেতে পারে। ক্র্যানবেরির রসও এই সমস্যা সমধানে বেশ উপকারী।
  • শসাতে প্রচুর পানি আছে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে একটি শসা স্লাইস করে খেতে পারেন।
  • কিছু সেলেরি বীজ চিবান, এ বীজ মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এক মুঠো সেলেরি বীজ চিবিয়ে রস খেতে পারেন অথবা এক কাপ গরম পানিতে কিছু সেলেরি বীজ দিয়ে ঢেকে দিন। ৮ মিনিট পর মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এটা ইউটিআই প্রতিরোধ করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url