আরবি কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম - মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি কি নিষিদ্ধ

আরবি কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম - মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি কি নিষিদ্ধ


মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি কি নিষিদ্ধ 

ইসলামের দৃষ্টিতে মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ নয়। বরং বছরের কোন মাসেই কোন সময়ই বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ নয়। এ মর্মে যে সব কথা প্রচলিত রয়েছে সব‌ই ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার।

মুহররম মাস নিয়ে শিয়াদের বাড়াবাড়ি:


মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি করা ঠিক নয়- মর্মে প্রচলিত কথাটি শিয়া-রাফেযি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মিথ্যা প্রচারণা হতে পারে। কেননা, এ মাসে (মুহররম মাসের ১০ তারিখে) হুসাইন রা. কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা মিথ্যা মায়াকান্না আর অতিভক্তি দেখিয়ে এ মাসে অনেক বিদআতি কার্যক্রম করে থাকে এবং শরিয়তের অনেক বৈধ জিনিসকে অবৈধ করে থাকে। যেমন তারা বলে, মুহররম মাসে নতুন জামা পড়া যাবে না, গোস্ত-মাছ ইত্যাদি ভালো খাবার খাওয়া যাবে না বরং কেবল নিরামিষ খেতে হবে, বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শুতে হবে, বিয়াশাদী দেয়া বা করা বৈধ নয়...ইত্যাদি। অথচ এ সব কথা শুধু দলীল বহির্ভূত নয় বরং দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন ছাড়া অন্য কিছু নয়। ইসলামি শরিয়ত যা নিষেধ করে নি তা নিষেধ করা মানে দ্বীনের মধ্যে সীমালঙ্ঘন এবং ধৃষ্টতা প্রদর্শন।


নি:সন্দেহে হুসাইন রা. এর মৃত্যুতে আমরা বেদনাহত ও মর্মাহত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে সবরের পরিচয় দিতে হবে এবং তাদের জন্য দুআ করতে হবে। কারণ হুসাইন রা. এর পূর্বে তার পিতা আলি ইবনে তালিব রা., উসমান বিন আফফান রা., উমর ইবনুল খাত্তাব রা. সহ অসংখ্য সাহাবি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। অথচ তাদের মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্ব মর্মাহত হলেও এ সব নিয়ে কোন ধরণের বাড়াবড়ি মূলক কার্যক্রম করে না। কেননা ইসলাম কারো মৃত্যু/শাহাদতকে কেন্দ্র করে বিলাপ করা, শরীরে আঘাত করা, শরীর রক্তাক্ত করা, পরিধেয় কাপড় ছেঁড়া, মাটিতে গড়াগড়ি করা, উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা, শোক দিবস পালন করা, কালো পোশাক ও কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক র‍্যালী ও তাজিয়া মিছিল করা...ইত্যাদি কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ হারাম ও জাহেলিয়াতের কাজ হিসেবে ঘোষণা করেছে।


◈ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ

“সে ব্যক্তি আমাদের লোক নয় যে গালে চপেটাঘাত করে, জামার পকেট ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত ডাকে। “ [সহীহ বুখারি: অনুচ্ছেদ: সে আমাদের লোক নয় যে, গালে চপেটাঘাত করে। হাদিস নং ১২৯৭, মাকতাবা শামেলা]


◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,

النِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ

“বিলাপ করা (কারও মৃত্যুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন গুণের কথা উল্লেখ করে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করা, শরীরে আঘাত করা, জামা-কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি) জাহেলি যুগের কাজ।” [ইবনে মাজাহ, অনুচ্ছেদ: মৃতকে কেন্দ্র করে চিৎকার করে বিলাপ করা নিষিদ্ধ। আল্লামা আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১২৮৬, মাকতাবা শামেলা]


আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন।


সুতরাং মুহররম মাসকে কেন্দ্র করে, আমাদের সমাজে যে সেকল বাতিল ও বিদআতি কার্যক্রম এবং ভিত্তিহীন বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে সেগুলো থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে এবং সামাজিকভাবে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ একদিন আমাদের সমাজ বিদআত ও কুসংস্কারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ধর্মের নামে সকল অধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

▬▬▬◈◆◈▬▬▬

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব 


আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে শারঈ কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি 

মাহরাম বা কুরআনে যে ১৪ জন নারীকে বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারা ব্যতীত অন্য আত্মীয়দের বিবাহ করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ‘আত্মীয়রা আত্মীয়দের বিবাহ করো না...’- মর্মে বর্ণিত কথাটি হাদীছ নয়। সম্ভবতঃ ইমাম গাযালী তাঁর আল-ওয়াসীত্ব ও ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন গ্রন্থে (২/৪১) এটিকে কয়েকটি হাদীছের মধ্যে উল্লেখ করায় অনেকে ধোঁকায় পতিত হয়েছেন। আসলে হাদীছ হিসাবে এর কোন ভিত্তি নেই (যঈফাহ হা/৫৩৬৫)। তাছাড়া এটি কুরআন ও হাদীছের বিরোধী। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমরা তোমার জন্য হালাল করেছি ঐসব স্ত্রীদের, যাদেরকে তুমি মোহর দিয়েছ এবং ঐসব দাসীদের, যাদেরকে আল্লাহ তোমার জন্য গণীমত হিসাবে প্রদান করেছেন। আর তোমার চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন ও খালাতো বোনকে, যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে (আহযাব ৩৩/৫০)। আর রাসূল (ছাঃ) তার মেয়ে ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহ দেন আপন চাচাতো ভাই আলী (রাঃ)-এর সাথে (শারবীনী, মুগনিল মুহতাজ ৪/২০৬)। অপর দুই মেয়ের বিবাহ দেন আপন চাচা আবু লাহাবের দুই ছেলের সাথে। তিনি নিজেও উম্মে সালামা, আয়েশা, উম্মে হাবীবাসহ অনেক কুরায়েশী আত্মীয়াকে বিবাহ করেন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url