সালাতুত তওবার ফযিলত - তওবার নামাজের ফজিলত

সালাতুত তওবার ফযিলত - তওবার নামাজের ফজিলত, নিয়ম করে সকালে ও রাতে তা আদায় করার বিধান কি, সমাজে প্রচলিত পাঁচ কালিমা কি সঠিক আজকের আলোচনার বিষয়বস্ত এগুলোই। একজন মুসলিম হিসেবে আপনার অবশ্যই এগুলো সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা দরকার। আপনি যদি এগুলো সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। 

সালাতুত তওবার ফযিলত - তওবার নামাজের ফজিলত

সালাতুত তওবার ফযিলত - তওবার নামাজের ফজিলত একজন মুসলিম হিসেবে এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনার জানা অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা অনেকেই সালাত আদায় করি কিন্তু তওবা নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কয়জনই বা জানি। এ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে আজকে আমাদের এ পোস্টটি সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ সালাতুত তওবার ফযিলত - তওবার নামাজের ফজিলত

সালাতুত তওবার ফযিলত - তওবার নামাজের ফজিলত

গুনাহ মোচনের জন্য সালাতুত তওবা অত্যন্ত কার্যকরী একটি সালাত। আহলে ইলমগণ এ সালাত পড়ার বৈধতার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে একাধিক হাদিস। যেমন- আবু বকর রা. বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি-

مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللَّهَ إِلاَّ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ ‏{وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ ‏}‏ إِلَى آخِرِ الآيَةِ

"যখন কোনো বান্দা গুনাহ করার পর সুন্দরভাবে উযু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে অত:পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।"

অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “এবং যখন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে কিংবা নিজেদের উপর অত্যাচার করে আল্লাহকে স্বরণ করে" আয়াতের শেষ পর্যন্ত।(সূরা আলে ‘ইমরান: ১৩৫)।

ইমাম তাবরানী কিতাব আল-কবিরে বিশুদ্ধ সনদে আবুদ্ দারদা রা. হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেন, তাতে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ أَوْ أَرْبَعًا (شك أحد الرواة) يُحْسِنُ فِيهِمَا الذِّكْرَ وَالْخُشُوعَ ، ثُمَّ اسْتَغْفَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ ، غَفَرَ لَهُ

“যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওজু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দুই বা চার রাকাত (এক বর্ণনাকারী সংখ্যার ব্যাপারে সন্দিহান) সালাত আদায় করে এবং তাতে সে ভালোভাবে রুকু ও সেজদা করে, তারপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন।" এটাকেই সালাতুত তওবা বলা হয়।

সুতরাং যে কোনো গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে আমাদের কর্তব্য হবে, কাল বিলম্ব না করে সুন্দরভাবে ওযু করে একান্ত নিবিষ্টচিত্তে দু বা চার রাকআত সালাত আদায় করে মহান রবের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাহলে আশা করা যায়, দয়াময় আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি পরম দয়ালু ও অতিশয় ক্ষমাশীল।

নিয়ম করে সকালে ও রাতে তা আদায় করার বিধান কি

তবে প্রতিদিন সকালে কিংবা রাতে বা অন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে তা আদায় করা ঠিক নয়। কেননা আমাদের পূর্বসূরি তথা সাহাবী ও তাবেঈনের কেউ এমনটি করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া ক্ষেত্রে তারা ছিলেন আমাদের চেয়েও অধিক অগ্রগামী।

সুতরাং সালাতুত তওবা আদায় করার জন্য এভাবে নতুন নিয়ম চালু করা হলে তা বিদআতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, যখন আপনি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে এ সালাত আদায় করবেন তখন স্বভাবতই প্রশ্ন সৃষ্টি হবে যে, এটা কি তাহলে নিয়মিত সুন্নত (সুন্নাতে রাতেবা)? 

নিয়মিত সুন্নত হলে তার দলিল কোথায়? আর যেহেতু নিয়মিত পড়ার দলিল নেই তাই এমনটি করা ঠিক হবে না। বরং যখনই কোনো গুনাহ সংঘটিত হবে তখনই তা পড়া উচিৎ। এটাই সঠিক নিয়ম। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন। (আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি)

সমাজে প্রচলিত পাঁচ কালিমা কি সঠিক

মানুষের মুক্তি ও সাফল্যের জন্য কালিমায়ে তাইয়েবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই) এই একটি কালিমার স্বীকৃতি প্রদান এবং তদনুযায়ী আমল করাই যথেষ্ট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ 

« أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ »

”কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভে সেই ব্যক্তি সৌভাগ্য মণ্ডিত হবে, যে আন্তরিকভাবে বলবে: `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' তথা আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই।"(সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ,হাদিসের প্রতি আগ্রহ,হাদীস নং ৯৯,শামেলা)

আবদুল্লাহ বিন ওমার রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: এই সাক্ষ্য দেয়া যে,আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ

«مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مَنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ، وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ»

“যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই’ এ কথার স্বীকৃতি দান করল এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাস্যকে অস্বীকার করল, তার ধন-সম্পদ ও জীবন নিরাপদ হল এবং তার কৃতকর্মের হিসাব আল্লাহর উপর বর্তাল। [সহীহ মুসলিম:২৩]

এছাড়াও অসংখ্য হাদীস রয়েছে যেগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কালিমায় তাইয়েবার মধ্যেই মানবতার সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণ সন্নিহিত রয়েছে। আমাদের সমাজে প্রচলিত কালিমা গুলো হল-

  1. কালিমায়ে তাইয়েবা
  2. কালিমায়ে শাহাদাত
  3. কালিমায়ে তাওহীদ
  4. কালিমায়ে তামযীদ
  5. কালিমায়ে রদ্দে কুফর

উক্ত কালিমাগুলোর মর্মার্থ সামগ্রিকভাবে সঠিক। কিন্তু হুবহু শব্দে সবগুলো বাক্য হাদীসে পাওয়া যায় না। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ সব কালিমার মধ্যে মূলত: তাইয়েবার ব্যাখ্যা প্রস্ফুটিত হয়েছে। সুতরাং সেগুলোও পাঠ করায় দোষ নেই। কিন্তু ওগুলো না পড়লে বা মুখস্থ না করলে মুসলিম থাকা যাবে না-এ কথা ঠিক নয়। আল্লাহু আলাম। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url