৬ প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয়

স্ত্রী কি তার শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করতে বাধ্য, ৬ প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয়, ভালোবেসে বিয়ে করা কি জায়েজ, মহিলাদের জন্য নার্সের চাকুরী করা কতটুকু শরী‘আতসম্মত এ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে আজকের এই পোস্টে। আশা করি এ বিষয়গুলো আপনার ব্যক্তিগত জীবনে অনেক প্রয়োজনীয় বিষয়। 

৬ প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয়

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে করা সুন্নত। কিন্তু সকল ধরনের নারী পুরুষকে কি বিয়ে করা যাবে এ বিষয়ে অনেক প্রশ্ন জাগে মনে। আজকে আমরা এই বিষয়গুলোই জানবো এই পোষ্টের মাধ্যমে। বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দিন। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দ্বীনদার স্বামী-স্ত্রী ও নেক সন্তান দান করুন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ ৬ প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয় 

  • স্ত্রী কি তার শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করতে বাধ্য
  • ৬ প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয়
  • ভালোবেসে বিয়ে করা কি জায়েজ
  • মহিলাদের জন্য নার্সের চাকুরী করা কতটুকু শরী‘আতসম্মত

স্ত্রী কি তার শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করতে বাধ্য

একজন নারীর বিবাহের পূর্বে তার অভিবাবক হলেন তার পিতা। আর বিবাহের পর স্বামীই তার স্ত্রীর মূল অভিভাবক।কারন মহান আল্লাহ তাআলা পুরুষকে স্ত্রীর উপর দায়িত্ববান ও কর্তৃত্ব শীল হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।ইসলামি শরিয়তে স্ত্রীর জন্য তার স্বামী ছাড়া অন্য কারও সেবা করাকে ফরয করা হয় নি।

স্বামীর পিতা,মাতা,ভাই-বোন বা অন্য কাররই নয়।মহান আল্লাহ বলেন,"পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব শীল (দায়িত্ববান) এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।(সূরা নিসা,৪/৩৪) অর্থাৎ ইসলাম পুরুষকে নারীর নেতা বানিয়েছে।

নারীর উপর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তাকে তার স্বামীর যা আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তার আনুগত্য করা।পাশাপাশি শশুর-শাশুড়ির সেবা করা যেমন স্বামীর প্রতি ইহসান ও ভালবাসার বর্হিঃপ্রকাশ এবং বিরাট সওয়াবের কাজ আর স্ত্রী হিসেবে স্বামীর প্রতি আনুগত্য হচ্ছে স্ত্রী তার স্বামীর পরিবারের প্রতি দয়াবান থাকবে এবং সাধ্য অনুযায়ী শ্বশুর শাশুড়ীর সেবা যত্ন করবে, স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। 

স্বামীর পক্ষ থেকে খরচ ও কষ্ট করার কারণে আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮] বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোক-চক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লাহর হিফাযতে (তাওফীকে) তারা তা হিফাযত করে’ (সূরা আন-নিসা : ৩৪)।

সুতরাং পুরোপুরিভাবে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর অপরিহার্য। যেমন সেবা-যত্নে, ভ্রমণে,শক্তিশালীকরণে এবং অন্যান্য বিষয়ে যা সহীহ সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত। বিবাহের পূর্বে যেমন পিতা-মাতার আনুগত্য করা ওয়াজিব ছিল, বিবাহের পর ঠিক তেমনি স্বামীর আনুগত্য করা অপরিহার্য।

পিতা-মাতার কাছ থেকে সমস্ত আনুগত্য স্বামীর কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। পিতা-মাতার আর কোন আনুগত্য অবশিষ্ট নেই’।(মাজমূঊল ফাতাওয়া,খন্ড:৩২ পৃষ্ঠা:২৬০-২৬১)।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ আরো বলেছেন: একজন মহিলা যখন বিয়ে করে, তখন তার স্বামী তার তার পিতামাতার চেয়ে তার উপর অধিক কর্তৃত্ব থাকে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করা তার জন্য বাধ্যতামূলক।স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকার নেই,স্ত্রীর পিতা-মাতা বা অন্য কেউ আদেশ দিলেও স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বাইরে বের হ’তে পারবে না। 

এই ব্যাপারে চার ইমামের ঐক্যমত রয়েছে।(মাজমূ‘উল ফাতাওয়া খন্ড: ৩২ পৃষ্ঠা:৩৬১)। সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন: “শরিয়াতে এমন কিছু নেই যা প্রমাণ করে যে স্ত্রী তার স্বামীর মাকে সাহায্য করতে বাধ্য। তবে যতটুকু সম্ভব ন্যায় সঙ্গত ভাবে স্ত্রীর স্বামীর পরিবারের সাথে ভালো আচরণ করবে।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড:১৯ পৃষ্ঠা:২৬৪-২৬৫)

পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে,স্বামীর পিতা-মাতার খেদমত করা স্ত্রীর উপর আবশ্যক নয়।অর্থাৎ শশুর-শাশুড়ী তাকে যা করতে আদেশ করবে তাতে সে তাদের আনুগত্য করতে বাধ্য নয়,স্বামী তা গ্রহণ করুক বা না করুক,তবে স্ত্রীর জন্য তার শশুর শাশুড়ির সাথে যথাসাধ্য ভালো ব্যবহার করা জরুরি। এটি তার স্বামীর প্রতি তার আনুগত্যের বিরোধিতা করে না।(বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪০৬৮৭)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

৬ প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয়

ইসলামী শরীয়তে ছয় প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয়। বিয়ে করা সুন্নত, তাই বলে সকল ধরনের মহিলাকে যে বিয়ে করা যাবে, আবার সকল পুরুষকে নারী বিয়ে করবে তাহলে সেটি ইসলামের শরীয়ত মোতাবেক হবে না। নিচে বর্ণনা করা হলো যে ছয় প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয় তাদের সম্পর্কে- 
  1. আন্নানা
  2. মান্নানা
  3. হান্নানা
  4. হাদ্দাকা
  5. বাররাকা
  6. শাদ্দাকা
  • “আন্নানা” হলো সেই নারী যে সবসময় ‘হায় আফসোস’ ‘হায় আফসোস’ করতে থাকে। এবং অলস, ‘রোগিণী’র ভান করে বসে থাকে। এমন নারীকে বিয়ে করলে সংসারে বরকত হয় না।
  • “মান্নানা” হলো সেই নারী যে স্বামীকে প্রায়ই বলে, আমি তোমার জন্যে এই করেছি, সেই করেছি।’ হেন করেছি, তেন করেছি, ইত্যাদি ইত্যাদি।
  • “হান্নানা” হলো সেই নারী যে তার পূর্বের স্বামী বা প্রেমিকের প্রতি আসক্ত থাকে।
  • “হাদ্দাকা” হলো সেই নারী, যে কোনো কিছুর উপর থেকেই লোভ সামলাতে পারে না। সব কিছুই পেতে চায়, এবং স্বামীকে তা ক্রয়ের জন্যে নিয়মিত চাপে রাখে।
  • “বাররাকা” হলো সেই নারী যে সারাদিন কেবল সাজসজ্জা ও প্রসাধনী নিয়ে মেতে থাকে। এই শব্দের অন্য একটি অর্থ হলো, যে নারী খেতে বসে রাগ করে চলে যায়। এবং পরে একা একা খায়।
  • “শাদ্দাকা” হলো সেই নারী যে সবসময় বকবক করে।

বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দিন। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে দ্বীনদার স্বামী-স্ত্রী ও নেক সন্তান দান করুন। 

ভালোবেসে বিয়ে করা কি জায়েজ

প্রেম মানুষের অন্তরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম, যা কারো প্রতি আবেগ, গভীর অনুভূতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়। প্রকৃত প্রেম হলো মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি প্রেম, যা ছাড়া অন্য কোনো মানুষ ঈমানদার হতে পারবে না। 

দুনিয়ায় কেউ কাউকে ভালোবাসলে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মা ও রক্তের আত্মীয়দের প্রতি প্রেমও মহান আল্লাহ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত করে দেন।

বর্তমানে এমন হয় যে, ছেলে পড়াশোনা শেষ করে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটা চাকরি যোগাড় করার পর বাবা-মার খেয়ালে আসে যে ছেলের বিয়ে দেয়া দরকার। শুরু হয় পাত্রী খোঁজা অভিযান। পাত্রী পাবার পর ছেলেকে পিতা-মাতা জিজ্ঞাসা করেন, এরকম একটা মেয়ে পেয়েছি, তোমার কি মত? 

লাজুক ছেলে সলজ্জে উত্তর দেয়, ‘আপনারা মুরুব্বী মানুষ, আপনারা যা ভালো বুঝেন তাই করেন।’ মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলে মেয়ে উপহার দেয় আবহমান উত্তর, ‘আমার আর কি বলার আছে; আপনাদের মতই আমার মত।’ 

অবশেষে সকল খালা-ফুফুকে সন্তুষ্ট করে তাদের বিয়ে হয়। তবে যাদের বিয়ে তাদের পছন্দের চেয়ে দুই পরিবারের পারস্পরিক পছন্দই বিয়েতে প্রাধান্য পায় বেশী। এটা যে ইসলামসম্মত নয় বা এটা ঠিক নয়, তবে এটাই সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি কি? আল্লাহ সুবনাহানাহু ওয়া তায়া’লা কুরআনে বলেছেন- 

মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই। [সূরা নিসা :৩]

লক্ষ্য করুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা আমাদের সেইসব নারীদেরকে বিয়ে করতে বলছেন যাদেরকে আমাদের ভাললাগে। মারীফুল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যাদের তোমরা পছন্দ করো’ আর হাফেজ মুনির ভাই অনুবাদ করেছেন, ‘যাদেরকে তোমরা ভালোবাসো’। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া’লা আমাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েছেন। 

আনাস (রাঃ) এ ধরণের একটা ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন , একবার এক মহিলা রাসূলুল্লাহর (সা) খেদমতে হাজির হয়ে তার সাথে নিজেকে বিয়ের জন্য সরাসরি প্রস্তাব পেশ করেন। এ কথা শুনে পাশে থাকা আনাস (রাঃ) এর কন্যা বলে উঠলেন,‘মেয়েটা কত নির্লজ্জই না ছিল’ আনাস (রাঃ) তাকে বললেন, ‘সে তোমার তুলনায় অনেক ভালো ছিল। 

সে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং নিজেকে রাসূলের (সা.) নিকট বিয়ের জন্য পেশ করেছিলো।’ [ সাহল ইবন সাদ(রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এ ঘটনাটি সাহীহ বুখারীতে এসেছে। ৮ম খন্ড, ৬০০৭ ও ৬০৩৬ নং হাদিস। ]

তবে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বিয়ের আগে প্রেম করা সম্পূর্ণ হারাম কাজ। আপনার যাকে ভালো লাগবে তাকে আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারবেন। কিন্তু আপনি বিয়ের আগে তার সাথে কোন রকম সম্পর্ক করতে পারবেন না। যদি করেন তাহলে সেটি সম্পূর্ণ হারাম কাজ হবে। 

মহিলাদের জন্য নার্সের চাকুরী করা কতটুকু শরী‘আতসম্মত

গৃহই নারীর মূল কর্মস্থল (আহযাব ৩৩/৩৩)। বিশেষ প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যেতে হ’লে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করতে হবে। আর চিকিৎসা যেহেতু মানুষের মৌলিক অধিকার, সেহেতু প্রয়োজনে নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর চাকুরী করা নারীদের জন্য শরী‘আতসম্মত। 

সেক্ষেত্রে হাসপাতালগুলিতে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক বিভাগ থাকা আবশ্যক। কিন্তু যদি এরূপ ব্যবস্থা না থাকে, তবে সার্বক্ষণিক পর্দার মধ্যে থাকা এবং পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা সাপেক্ষে নারীরা নার্সিং বা চিকিৎসা পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারে। 

অবশেষে বলা যায় বিয়ে করলে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে উত্তম। আর ইসলামী শরীয়তে ছয় প্রকার নারীকে বিয়ে করা উচিত নয়। তাদের সম্পর্কে উপরে  বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url