আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা ৫ম শ্রেণি - আমার প্রিয় শিক্ষক অনুচ্ছেদ

বন্ধুরা, পিতা-মাতার পরে যিনি আমাদের গুরুজন হোন তিনি হলেন শিক্ষক। একজন ভালো শিক্ষকই হল আমাদের জীবনের শিক্ষাগুরু। তাই আজকে আমরা, আমার প্রিয় শিক্ষক রচনাটি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো। পঞ্চম শ্রেণী থেকে শুরু করে, সকল ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। পুরো রচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা ৫ম শ্রেণি - আমার প্রিয় শিক্ষক অনুচ্ছেদ


আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা ৫ম শ্রেণি - আমার প্রিয় শিক্ষক অনুচ্ছেদ

ভূমিকা: পিতা মাতা আমাদের জন্মদাতা, লালন পালন কর্তা, আমাদের গুরুজন। আর শিক্ষকেরা হচ্ছেন আমাদের শিক্ষাগুরু। সেজন্য পিতা-মাতা আমাদের কাছে যেমন শ্রদ্ধার ব্যক্তি এবং প্রিয়পাত্র, শিক্ষকগণও তেমনই আমাদের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ও প্রিয়পাত্র। বলা যায়, পিতা-মাতার চেয়ে তাঁরাও কোনো অংশে কম নয়। কারণ তাঁরা আমাদের জ্ঞান দান করেন, মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন।

তাঁদের শিক্ষা, আদর্শ, অনুপ্রেরণা, মহত্ত্ব সবই আমাদেরকে প্রবলভাবে প্রভাবিত, অনুপ্রাণিত করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দিক-নির্দেশনা দান করে। তাঁরা ব্যক্তি এবং জাতির বিবেক বা পথপ্রদর্শক। তাঁদের মধ্যে এমনও দু'একজন শিক্ষক আছেন, যাঁরা বিশেষের মধ্যে বিশেষ। শিক্ষাজীবনে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর কাছে তাঁরা এতটাই প্রিয় যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। 

আমার শিক্ষাজীবনেও এমন একজন শিক্ষক রয়েছেন, যিনি আমার সব আদর্শ, শিক্ষা, অনুপ্রেরণা সবকিছুর মূল। যার সংস্পর্শে এসে আমি আমার ভেতরের আমিত্বকে সর্বপ্রথম উপলব্ধি করি তিনি হচ্ছেন আমার প্রিয় শিক্ষক। 

আমার প্রিয় শিক্ষক: আমার প্রিয় শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ কামাল পাশা। সংক্ষেপে তিনি শুধু পাশা স্যার হিসেবে পরিচিত। তিনি আমার হাইস্কুল জীবনের প্রথম ক্লাসের প্রথম শিক্ষক। যেসব কারণে তাঁকে আমি প্রিয় শিক্ষক বলে মনে করি তা নিচে আলোচনা করা হলো- 

প্রথম পরিচয় এবং স্যারের বিশেষত্ব: শিক্ষাজীবনের কৈশোরলগ্নে ঠিক বিকাশের মুহূর্তে প্রিয় শিক্ষক মোহাম্মদ কামাল পাশার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। সেদিন ছিল আমার হাইস্কুল জীবনের ষষ্ঠ শ্রেণির প্রথম দিনের প্রথম ক্লাস। তিনি যখন ক্লাসে এলেন, আমরা সবাই দাঁড়িয়ে তাঁকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানালাম। তিনি ক্লাসে এসে প্রথমে অত্যন্ত স্নেহের সাথে সবার নাম পরিচয় জেনে কুশল বিনিময় করলেন। তারপর সবার উদ্দেশে কিছু উপদেশমূলক কথাবার্তা বললেন। 

তার মধ্যে কটি কথা ছিল এ রকম- "কান-টানলে মাথা আসে, মানুষ হও; জ্ঞান অর্জন করো, পাসের চিন্তা থাকবে না, অর্থের দৈন্যও কেটে যাবে। জীবনে কোনোদিন কোনো সমস্যাই তোমাদেরকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।” কথাগুলো সাদামাটা শোনালেও তিনি সেদিন যে কীভাবে আমাদের কানে প্রবেশ করিয়ে, প্রাণে পরশ লাগিয়ে দিয়েছিলেন, তা বোঝাতে পারব না। কী সম্মোহনী ক্ষমতা ছিল তাঁর সেদিনের সেই বিশেষ কথাগুলোতে, যা আজও আমার কানে বাজে, আমি পথ চলি আজ তারই আলোয়। 

স্যারের ব্যক্তিত্ব: ব্যক্তিত্ব মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়। মানুষের ব্যক্তিত্ব মানুষকে সবার আগে আকৃষ্ট করে। আমার প্রিয়। শিক্ষক পাশা স্যারকে আমি যেদিন প্রথম দেখি, সেদিনই তাঁর ব্যক্তিত্ব আমাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। তারপর দীর্ঘ পাঁচ বছর। ধরে আমি দেখেছি তাঁর ব্যক্তি চরিত্রের বিভিন্ন দিক; যা আমাকে আজ বিমুগ্ধ করে। তিনি ছিলেন মহানুভব, ব্যক্তিত্ববান, দৃঢ়চেতা। একজন আদর্শ মানুষ। 

সব শিক্ষার্থীর প্রতি তিনি ছিলেন অত্যন্ত দরদি ও যত্নশীল। অসাধারণ পান্ডিত্য ও আভিজাত্য ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ববোধে। মিথ্যাচার, ফাঁকিবাজি তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না। তিনি যা কিছু শিক্ষা দিতেন তাতে কোনো ফাঁক-ফোকর ছিল না। আর এসবের জন্যই তিনি আমার এবং সবার কাছে এত প্রিয় ছিলেন।

একজন আদর্শ শিক্ষক: পাশা স্যার ছিলেন একজন প্রকৃত ও আদর্শ শিক্ষক। একজন শিক্ষকের যে গুণগুলো থাকা দরকার তার প্রায় সবটুকুই তাঁর মধ্যে ছিল। তিনি ছিলেন অত্যন্ত কর্মঠ ও কর্তব্যনিষ্ঠ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিয়মানুবর্তী। ক্লাসে আসতে তিনি কখনো দেরি করতেন না। বিশেষ কোনো সমস্যা ছাড়া তিনি কখনো ক্লাস মিস করতেন না। ক্লাসে এসে কখনো অপ্রয়োজনীয় গল্প করে সময় নষ্ট করতেন না। তিনি ছাত্রদের ভালোবাসতেন পিতৃস্নেহ দিয়ে। 

তাঁর কথাবার্তা ছিল অত্যন্ত মধুর। তিনি ক্লাসে ঢুকলে পিনপতনের শব্দ শোনা যেত। এমনকি তিনি যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টাও ক্লাস নিতেন তবুও কেউ এতটুকু বিরক্তবোধ করত না। কখন সময় কেটে যেত, টেরই পাওয়া যেত না। শিক্ষকতা ছিল স্যারের জীবনের মহান ব্রত। তাই তিনি মনেপ্রাণেই একজন শিক্ষক হতে পেরেছিলেন, যার বহিঃপ্রকাশ বাইরেও সব সময় ঘটত। তাঁর মতো আদর্শ শিক্ষক আজ বড়ই দরকার, কিন্তু পাওয়া বড় দুষ্কর। 

আমাদের কাছের মানুষ ও বন্ধুবৎসল: পাশা স্যার ছিলেন আমাদের অত্যন্ত কাছের মানুষ এবং বন্ধুর মতো। তাঁর গাম্ভীর্য ভীতিপ্রদ হলেও ভেতরে ভেতরে তিনি ছিলেন অত্যন্ত কোমল মধুর। কোনো রকম গোঁড়ামি, অন্ধ-সংস্কার বা অহংকার তার মধ্যে ছিল না। অত্যন্ত সহজ-সরল, অনাড়ম্বর জীবন ছিল তাঁর, যা সবাইকে বিশেষ করে আমাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করত। আর সেজন্যই তিনি ছিলেন আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক। 

আমার জীবনের পথপ্রদর্শক: পাশা স্যার ছিলেন আমাদের জীবন নদীর দিকনির্দেশক মাঝি। তিনি ছিলেন আলোর দিশারি; আমার এবং আমাদের সবার জীবনের পথপ্রদর্শক। তিনিই প্রথম আমাকে যেকোনো বিষয় সম্পর্কে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছিলেন। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে আমাকে ভাবতে শিখিয়েছিলেন। 

তিনি ক্লাসে ঢুকে সাথে সাথে এবং বেরিয়ে যাওয়ার আগে এমন চমকপ্রদ দু'একটি প্রশ্ন আমাদের সামনে রেখে যেতেন যা কয়েক দিন পর্যন্ত আমাদের প্রচণ্ড রকম ভাবিয়ে তুলত এবং সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি আসত না। তাঁর শিক্ষা, আচরণ, বুদ্ধিদীপ্তি, ব্যক্তিত্ব আমাদের আত্মবিশ্বাসকে জাগিয়ে তুলেছে। তাঁর সেই শিক্ষার বলেই আমরা আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করার পথে অগ্রসর হতে সক্ষম হচ্ছি। আমরা, বিশেষ করে আমি আমার জীবনে তাঁর অবদানের কথা কখনও ভুলতে পারব না।

উপসংহার: প্রতিটি মানুষেরই ভালো-মন্দ দুটি দিক থাকে। দোষ-গুণ ছাড়া কোনো মানুষই হয় না। আমার প্রিয় শিক্ষক পাশা সাহেবেরও ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো ছোট-খাটো দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু সেগুলো আমার বিবেচ্য নয়। আমি যেটুকু জানি, তাতে তাঁর মতো নম্র-ভদ্র, মার্জিত, রুচিশীল, উদার-মহৎ, আদর্শ-নীতিমান একজন মানুষ এখন পাওয়া বড়ই কঠিন। 

তাঁর মতো শিক্ষকের সাহচর্য পেলে আমার মনে হয়, যে কোনো শিক্ষার্থীর জীবনই আলোয় ভরে উঠবে। আর সে জন্যই তিনি আমার মনে ভাস্বর হয়ে আছেন, থাকবেন চিরদিন- আমার প্রিয় শিক্ষক মোহাম্মদ কামাল পাশা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url