মাথায় হিজামা করার উপকারিতা - হিজামা চিকিৎসার উপকারিতা

হিজামা কি, হিজামা চিকিৎসার উপকারিতা, মাথায় হিজামা করার উপকারিতা, হিজামার পুর্বে ও পরে করনীয় আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় এই সকল বিষয়ে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে চিকিৎসা, হিজামা করা জায়েজ আছে কিনা সে সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

মাথায় হিজামা করার উপকারিতা - হিজামা চিকিৎসার উপকারিতা

এই চিকিৎসা পদ্ধতি বহু আগে থেকে চলে আসছে, বর্তমান সময়ে এটি নতুন প্রযুক্তি থেকে নতুন ভাবে রূপ নিয়েছে। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে, অর্থাৎ আমাদের মাঝে বিরাজমান। এটি প্রত্যেকটা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, হিজামার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।হিজামা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচীপত্রঃ মাথায় হিজামা করার উপকারিতা - হিজামা চিকিৎসার উপকারিতা

হিজামা কি

হিজামা হচ্ছে এমন প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে মানুষের সকল প্রকার শারীরীক, মানসিক ও আধ্যাত্নিক সুস্থ্যতা বিদ্যমান রয়েছে, এবং এটার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে গিয়েছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন।” সুনানে তিরমিযী হাদীছ নম্বর: ২০৫৩

হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় হিজামায় শেফা রয়েছে।” সহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর: ২২০৫

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্নিত, হুজুর (সঃ) বলেছেন, জিবরাঈল (আ) আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে,তন্মধ্যে হিজামা ই হলো সর্বোত্তম। (আল-হাকিম : ৭৪৭০)

হযরত আব্দু্ল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্নিত: রসুলু্ল্লাহ (স) বলেছেন, হিজামাকারী কতই উত্তম লোক। সে দূষিত রক্ত বের করে মেরুদণ্ড শক্ত করে ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে। (সুনানে তিরমিযী,২০৫৩)
হযরত আনাস (রা) হতে বর্নিত ; হুজুর (স) এরশাদ করেন, গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারন, কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে। (আল- হাকিম :৭৪৮২) 

হিজামা চিকিৎসার উপকারিতা

হিজামাই ডিটক্সিফিকেশনের একমাত্র নেচারাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শরীর থেকে দূষিত রক্ত বের করা হয় যা শরীর কে সতেজ ও অধিক কর্মক্ষম করে। হিজামা হচ্ছে এমন প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে মানুষের সকল প্রকার শারীরীক, মানসিক ও আধ্যাত্নিক সুস্থ্যতা বিদ্যমান রয়েছে, এবং এটার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

হিজামা চিকিৎসার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, সেগুলো নিজে বর্ণনা করা হলো-

  • রক্ত দূষন।
  • দীর্ঘমেয়াদী সাধারন মাথাব্যাথা।
  • মাইগ্রেন জনিত মাথাব্যাথা।
  • অস্তি সন্ধির ব্যাথা / গেটেবাত।
  • উচ্চ রক্তচাপ।
  • কোমর ব্যাথা।
  • হাটু ব্যাথা।
  • মাংস পেশীর ব্যাথা।
  • ঘাড়ে ব্যাথা।
  • স্পোর্টস ইনজুরী।
  • রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি।
  • শরীরের অর্গান সমুহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি।
  • অনিদ্রা
  • থাইরয়েড গ্রন্থীর সমস্যা।
  • হাপানি।
  • হৃদরোগ।(শুরু অবস্থায়)
  • মুটিয়ে যাওয়া।
  • রক্তসংবহন তন্ত্রের সংক্রমণ।
  • চর্মরোগ।
  • ডায়াবেটিস।
  • সাইনুসাইটিস।
  • চুল পড়া।
  • ব্রেইন ডিজেজ।
  • কোলেষ্টরেল।
  • ত্বকের নিম্নস্থিত বর্জ্য নিস্কাসন।
  • মানসিক সমস্যা।
  • পারকিনসন্স ডিজিজ।
  • কিডনির সমস্যা।(শুরু অবস্থায়)
  • লিভার ডিজিজ।
  • অনিয়মিত মাসিক ও মেয়েদের অন্যান্য সমস্যা।
  • মাদকাসক্তি।
  • প্যরালাইসিস।
  • মাথা ঘোরা।
  • যাদু টোনা
  • পাইলস

আরো অনেক রোগের উপকার হয়। হিজামা বা কাপিং চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ৩ হাজার বছর পুরনো এবং হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিজে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহনে তার সাহাবিদের উৎসাহিত করেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিজামা পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন বলে হাদিসে প্রমান পাওয়া যায়। 

তিনি শুধু ব্যবহার ই করেন নি বরং তার সাহাবি ও সাথীদের ব্যবহারে উৎসাহিত করেছিলেন। হিজামার মাধ্যমে সাধারনত শরীর থেকে বদ রক্ত বের করে দেয় যা মূলত কিডনি ডায়ালাইসিস করে। গবেষনার দেখা গেছে হিজামা গ্রহনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পূর্বের তুলনায় ১৫ শতাংশ ঔষধ কম ব্যবহার করতে হয়।

মাথায় হিজামা করার উপকারিতা

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা: বর্ণনা করেন ।রাসুলূল্লাহ সা: যখন ইহরাম অবস্থায় তখন একগুঁয়ে মাথাব্যথার জন্য হিজামা ব্যবহার করেন। (বুখারী ৫৭০১) সালমা রা: বলেন.যখন কেউ রাসুলুল্লাহ সা: এর নিকট এসে মাথাব্যথার কথা বলত.তিনি তাদেরকে হিজামা লাগানোর কথা বলতেন । (আবু দাউদ ৩৮৫৮)

ইবনুল কাইয়ুম রহ:মন্তব্য করেন.রাসুলুল্লাহ সা:যখন যাদু দ্বারা পীড়ীত হন তখন তিনি মাথায় শিঙ্গা লাগান।এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ যদি সঠিক ভাবে করা হয়। (যাদুল মায়াদ ৪/১২৫-১২৬)

মাথায় হিজামা লাগানোর দ্বারা বিশেষভাবে কিছু রোগের উপকার হয় সেটা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হল-

  • মাইগ্রেন জনিত দীর্ঘ মেয়াদী মাথাব্যথা এবং সাধারন মাথাব্যথা।
  • উচ্চ রক্তচাপ।
  • রক্তদূষন।
  • ঘুমের ব্যঘাত।
  • স্মৃতি ভ্রষ্টতা।
  • ঘাড়ে ব্যথা।
  • হরমোনাল সমস্যা ।
  • সাইনুসাইটিস।
  • মানসিক সমস্যা।
  • চুল পড়া।
  • পারকিনসন্স ডিজিজ।
  • ব্রেইন ডিজিজ।
  • মাদকাসক্তি।
  • প্যরালাইসিস।
  • যাদু টোনার সমস্যা ইত্যাদি।

এছাড়া আরো কয়েকটি পদ্ধতিতে হিজামা করা হয়। যেমন- 

ড্রাই কাপিংঃ এটা একধরনের ড্রাই কাপিং ম্যাসাজ। যারা রক্ত বের করতে চান না তাদের জন্য এই থেরাপি। এই থেরাপির দ্বারা শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি ও মাংস পেশী সতেজ হয়, ব্যাথা- বেদনা দূর হয় যা আপনাকে দিবে এক আনন্দদায়ক অনুভূতি।

ফেসিয়াল কাপিংঃ এটা একধরনের ফেসিয়াল ম্যাসাজ, যা ভ্যাকিউয়াম কাপ দ্বারা করা হয়, ফলে চেহারার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায় ও ত্বক মসৃন হয়।

সুন্নাহ হিজামা বা ওয়েট কাপিংঃ হিজামাই ডিটক্সিফিকেশনের একমাত্র নেচারাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শরীর থেকে দূষিত রক্ত বের করা হয় যা শরীর কে সতেজ ও অধিক কর্মক্ষম করে।

হিজামার পুর্বে ও পরে করনীয়

হিজামার পুর্বে  করনীয় বিষয়সমূহ-

  • হিজামার পুর্বে দুই ঘন্টা পর্যন্ত খাবার থেকে বিরত থাকবেন।
  • গোসল করে নিবেন।

হিজামার পরে করনীয় বিষয়সমূহ-

  • ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত গোসল করা যাবে না এবং হিজামার জায়গায় পানি লাগানো যাবেনা।
  • ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত কোন ব্যয়াম এবং স্ত্রী সহবাস করা যাবেনা।
  • ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত লম্বা সফর করা যাবেনা।
  • ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত কোন গরম সেক ইত্যাদি দেয়া যাবে না।

আসুন আমরা সুন্নাহভিত্তিক হিজামা চিকিৎসা নেই, শরীরকে সুস্থ রাখি।

আশা করি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়েছেন। ইতিমধ্যে হয়তো আপনি জেনে গেছেন হিজামা করার উপকারিতা, আবার মাথায় হিজামা করার উপকারিতা কি সেটাও জেনে গেছেন।এই চিকিৎসা আসলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং এটি ইসলামের সম্মতি দেয়ার রয়েছে। আপনি চাইলে এই চিকিৎসা করতে পারবেন। আপনি যদি পোস্ট পড়ে উপকৃত হন, তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি আমাদেরকে জানাবেন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url