বৃষ্টির পানির উপকারিতা - বৃষ্টির পানির pH কত

বিশুদ্ধ এবং পানযোগ্য পানির একটি উৎস হলো বৃষ্টির পানি। বৃষ্টির পানির উপকারিতা অনেক, তবে অ্যাসিড বৃষ্টির পানি আমাদের জন্য উপকারিতা নয়। আমরা অনেকে মনে করি বৃষ্টিতে ভিজলে আমাদের শুধু সর্দি-কাশি, জ্বর এই অসুখ গুলোই ছড়ায়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আমরা অনেকেই জানিনা বৃষ্টির পানির PH কত। 

বৃষ্টির পানির উপকারিতা - বৃষ্টির পানির pH কত

আমরা আজকে জানবো বৃষ্টির পানির উপকারিতা এবং বৃষ্টির পানির PH কত, আরো জানবো বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়। আপনি যদি এসব কিছু বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে আপনাদের সঙ্গে এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

সূচিপত্রঃ বৃষ্টির পানির উপকারিতা - বৃষ্টির পানির pH কত

বৃষ্টির পানির pH কত

PH স্কেল হল আসলে একটি পরিমাপ ব্যবস্থা।এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কোন দ্রবণ কতটা আম্লিক বা কতটা ক্ষারকীয় বা প্রশম তা পরিমাপ করা যায়।

PH স্কেলে সর্বনিম্ন 0 থেকে সর্বোচ্চ 14 পর্যন্ত রেখাঙ্কিত থাকে। প্রশমন দ্রবণ এর PH এর মান 7 এর কম এবং ক্ষারকীয় দ্রবণের PH এর মান 7 এর বেশি হয়। তীব্র ক্ষারের pH এর মান 11 এর বেশি এবং তীব্র অ্যাসিডের PH এর মান 3 এর কম হয়।

যদি দুটি দ্রবণের ই pH এর মান 7 এর কম হয় তাহলে বুঝতে হবে যে দুটি দ্রবণই আম্লীক প্রকৃতির এবং যে দ্রবণটির pH এর মান যত তুলনামূলকভাবে কম সেটি তুলনামূলকভাবে বেশি আম্লীক প্রকৃতির। বৃষ্টির পানির PH ৫.৬ এর সমান বা কম হয়ে থাকে।

স্বাভাবিক বৃষ্টির জলে বায়ুর (CO2) দ্রবীভূত অবস্থায় কার্বনিক এসিড (H2CO3) রূপে থাকে। কার্বনিক এসিড দুর্বল এসিড হওয়ায় এটি কম পরিমাণে আয়নিক হয়ে থাকে এবং বৃষ্টির জলে PH এর সবচেয়ে কম মান হতে পারে 5.6।

বৃষ্টির পানির উপকারিতা

বৃষ্টির পানিতে ভিজতে কার না ভালো লাগে না। তবে অনেকেই মনে করেন যে বৃষ্টির পানিতে ভিজলেই সর্দি-কাশি বেধে যায়। আসলে কথাটি পুরোপুরি সত্যি নয়। বৃষ্টির পানিতে রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা। চলুন জেনে নেই বৃষ্টির পানি থেকে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়-

  • কানের সমস্যা দূর করেঃ বৃষ্টির পানি এর একটি অন্যতম কার্যকারিতা হলো কানের সমস্যা দূর করা।কানের ব্যথা ও ইনফেকশন দূর করতে এই পানি বেশি উপকারী।
  • ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেঃ ভারী বৃষ্টির সময় যে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ এর ফলে পরিবেশে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। এতে ত্বক আরো উজ্জ্বল ও নমনীয় হয়ে ওঠে।
  • চর্ম রোগের সমস্যা দূর করেঃ বৃষ্টিতে ভিজলে বিভিন্ন চর্মরোগ দূর হয়। বিশেষ করে চুলকানি ফুসকুড়ি ও ঘামাচি দূর করতে বৃষ্টির পানি বেশ কার্যকারী। এছাড়া শরীরের খসখসে ভাব দূর করতে ও বৃষ্টির পানি বেশ ভূমিকা পালন করে।
  • চুল শক্তিশালী করেঃ বৃষ্টির পানিতে আছে প্রাকৃতিক অ্যালকাইন, যা মাথার ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং ময়লা দূর করে। এতে চুলের গোড়া হয় অনেক মজবুত। তাই বৃষ্টির পানি ব্যবহারের ফলে চুলের রুক্ষতা কমে এবং অধিক উজ্জ্বল দেখায়। এছাড়া এই পানি খুশকিও দূর করে।
  • অবসাদ মুক্তিঃ বৃষ্টিতে ভেজার ফলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরাটোনিন হরমোন ক্ষরণ হয়। এতে দূর হয় মানসিক অবসাদ। এ ছাড়া বৃষ্টির সময় পরিবেশে যে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে তাকে বলা হয় পেট্রিকোর। এটি মানুষকে আরও চনমনে করে তুলতে সহায়তা করে।
  • শরীরের বিষাক্ত উপাদান দূর করেঃ বৃষ্টির পানি পান করার ফলে দেহে থাকা বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় হজম ক্ষমতা। এই পানির রক্তের PH লেভেলকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে, তাই এসিডিটির মাত্রা কমে যায়।
  • জীবজন্তু উপকৃত হয়ঃ বিড়াল, ঘোড়া, কুকুর এবং অন্যান্য প্রাণী বৃষ্টির পানিতে ভিজলে অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে। এটা তাদের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। পাখি ও কীট পতঙ্গরাও বৃষ্টির পানি পান করতে পছন্দ করে। শুধু মানুষের জন্যই নয়, প্রাণী, চারাগাছ এবং বৃক্ষেরও বেড়ে উঠার জন্য বৃষ্টি পানির প্রয়োজন রয়েছে।
  • কাপড় ধুইতে সহায়তাঃ বৃষ্টির পানি দিয়ে কাপড় ধুলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা বাড়ে। আসলে স্বাভাবিক পানির তুলনায় বৃষ্টির পানিতে সাবান এবং ডিটারজেন্ট অনেক বেশি ও চমৎকার কাজ করে।
  • পাকস্থলীর সমস্যা দূর করেঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ থেকে ৩ চামচ বৃষ্টির পানি খেতে বলা হয়। পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটি বা আলসার থাকলে বৃষ্টির পানি ওষুধের কাজ করে।
  • ক্যান্সার বিরোধীঃ ক্যান্সার রোগীদেরে ক্ষেত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে বৃষ্টির পানি।

বৃষ্টির পানি কি খাওয়া যায়

বর্ষা মানেই পেটের রোগ, হাচি, সর্দি, কাশি, জ্বর। এই ধারণাটি আমাদের কাছে প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু বিষয়টা আসলে ঠিক তার উল্টোটাও হতে পারে। অনেক গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা বলছেন বৃষ্টির পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি।

অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা বলছে, বৃষ্টির পানি পান করা সবচেয়ে নিরাপদ। মাটি বা পাথরে থাকা মিনারেলস আর বর্জ্য বৃষ্টির পানিতে থাকে না। সেই কারণেই বৃষ্টির পানি পান করাতে রয়েছে অধিক উপকারিতা।

বৃষ্টির পানি পরিষ্কার হয়ে থাকলে, পান করায় ভুল কিছু নেই। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের অনেক সম্প্রদায় পানীয় জলের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে। কিন্তু তাই বলে বৃষ্টির সব ধরনের পানি পান করা যাবে না।

বিশুদ্ধ ও পানযোগ্য পানি হিসেবে যেসব উৎসব বিবেচনা করা হয়, সেগুলোর অন্যতম একটি উৎস হল বৃষ্টির পানি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, এই পানীয় আর পান করার জন্য নিরাপদ নয়। সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণা সাপেক্ষে এই মন্তব্য করেছেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীর সব প্রান্তে বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিকারক পিএফএএস রাসায়নিক পাওয়া যাচ্ছে আর এ রাসায়নিক এর মাত্রা এমন মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে যা আর পান করার জন্য নিরাপদ নয়।পিএফএএসকে ‘ক্ষতিকর রাসায়নিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কারণ, এই রাসায়নিক পদার্থ সহজে নষ্ট হয় না। প্যাকেজিং, শ্যাম্পু, মেকআপে প্রাথমিকভাবে এই রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছিল। এসব উপাদান থেকে এই রাসায়নিক পানি ও বাতাসে ছড়িয়েছে।

বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে

বৃষ্টি দুইভাবে হয়ে থাকে, এক হল সাধারণ বৃষ্টি আর দুই এসিড বৃষ্টি। বর্ষাকালে যে বৃষ্টি আমরা পেয়ে থাকি সেগুলো মূলত সাধারন বৃষ্টি হয়ে থাকে। এই বৃষ্টিতে এসিডের পরিমাণ কম থাকে। এই বৃষ্টির অনেক উপকারিতা রয়েছে, বৃষ্টির সকল উপকারিতা ওপরে বর্ণনা করা হয়েছে। সাধারণ বৃষ্টিতে আমরা ভিজতে পারি, তাতে আমাদের কোন সমস্যা হবে না।

এসিড বৃষ্টি, এসিড বৃষ্টির সেই বৃষ্টি কে বলে যে বৃষ্টি গ্রীষ্মকালে হঠাৎ করে হয় আবার বৃষ্টির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ কারখানা এবং অন্যান্য উৎস থেকে সৃষ্ট বায়ুবাহিত অ্যাসিডের কণা পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলে বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়ে। এ ধরনের বৃষ্টিকে মূলত এসিড বৃষ্টি বলা হয়। এটি পরিবেশের জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিকারক।

কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ইত্যাদির দহনের ফলে সৃষ্ট সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) এবং নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড বাতাসের জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সাথে মিলে সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ সৃষ্টি করে।

এসিড বৃষ্টির দ্বারা পরিবেশ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যেমন দালান-কোটার রং নষ্ট হয়ে যায়। ঘরের টিন নষ্ট হয়ে যায়, এছাড়াও এই বৃষ্টির যদি আপনার চুলে পড়ে তাহলে আপনার চুল উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আর তোকে পড়লে তোকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য আপনি যদি বুঝতে পারেন যে এসিড বৃষ্টি হচ্ছে, তাহলে আপনি কখনোই বৃষ্টিতে ভিজবেন না।

সাধারণভাবে যে বৃষ্টিগুলো হয় সে বৃষ্টির পানিতে সালফিউরিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। এছাড়াও বৃষ্টির পানিতে আরো নাইট্রাস এসিড পাওয়া যায়। এসিড বৃষ্টি থেকে সকলেই দূরে থাকবেন। এসিড বৃষ্টিতে কখনোই ভিজবেন না তাহলে আপনার চুল এবং ত্বক দুটোই নষ্ট হয়ে যাবে।

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে

ভারী বর্ষণের সময় পরিবেশে যে জলীয় বাষ্প থাকে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কেবল তাই নয়, বৃষ্টির পর জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ার ফলে পরিবেশে থাকা একাধিক ক্ষতিকর জীবাণুর কর্মক্ষমতাও কমে যায়। ফলে ত্বক হয় আরও উজ্জ্বল ও নমনীয়। ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরে পেতে বৃষ্টি দারুণ কাজ করে।

বৃষ্টির পানিতে থাকে ভিটামিন বি-১২। ভিটামিন বি-১২ সাধারনত ব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপন্ন হয় এবং ব্যাকটেরিয়া আছে এমন জায়গায় পাওয়া যায়। বৃষ্টির পানিতে থাকে হালকা অ্যালকাইন ও বেশ কিছু অণুজীব। যেগুলো বিপাকের মাধ্যমে ভিটামিন বি-১২ তৈরি করে।

সর্বশেষে বলা যায় যে বৃষ্টির পানি আমাদের জন্য উপকারী। কিন্তু এসিড বৃষ্টির পানি আমাদের জন্য উপকারী না বরং এটি আমাদের জন্য ক্ষতিকারক। আর সাধারণ বৃষ্টির পানির বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমরা উপরে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। আপনি যদি পোস্টটি সম্পন্ন করেন তাহলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বৃষ্টির পানির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে গেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url