ইসমে আজম কি - ইসমে আজম এর ফজিলত

মহান আল্লাহ তাআলার মর্যাদা সম্পন্ন নাম হলো- ‘ইসমে আজম’। এ মর্যাদাপূর্ণ নামের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে ডাকলে তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দেন। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন ইসমে আজম কি, ইসমে আজমের ফজিলত কি। আমি আজকে ইসমে আজমের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। 

ইসমে আজম কি - ইসমে আজম এর ফজিলত

ইসমে আজম এর আমল আমরা অনেকেই করে থাকি। কিন্তু আমরা সবাই সঠিক ভাবে জানিনা আজম কিংবা আমরা এটাও জানি না ইসমে আজম এর ফজিলত কি। ইসমে আজমের দোয়া, আজম এর দোয়া পড়ার নিয়ম এসব কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সবকিছু জানতে পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ইসমে আজম কি - ইসমে আজম এর ফজিলত

ইসমে আজম কি

ইসম অর্থ হচ্ছে নাম, আজম অর্থ হচ্ছে সবচাইতে মহান বা শ্রেষ্ঠ। সুতরাং ইসমে আজম এর অর্থ হচ্ছে “আল্লাহর সবচাইতে মহান বা শ্রেষ্ঠ নাম”। The Greatest Name of Allah.

আল্লাহ তাআ’লার সুন্দর সুন্দর অনেক নাম রয়েছে, যেমন খালিক্ব, আর-রহ’মান, আর-রহী’ম ইত্যাদি। একটি সহীহ হাদীসে আল্লাহর নাম ৯৯টি বলা হলেও, অন্য হাদীসে রয়েছে, এই ৯৯টি নামের বাইরে আল্লাহর আরো অনেক নাম রয়েছে, যা কোন মানুষকে জানানো হয়নি, অথবা আসলে কেউই জানেনা, এক আল্লাহ ছাড়া। এই সবগুলো নামের মাঝে যেই নাম দিয়ে আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সবচাইতে বেশী প্রকাশিত হয়, সেই নামকে ‘ইসমে আযম’ বলা হয়।

আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “ইসমে আজম হচ্ছে আল-হা’ইয়্যু (চিরঞ্জীব) এবং আল-ক্বাইয়্যুম (চিরস্থায়ী)। আল্লাহ তাআ’লাকে এই বলে দুয়া করা বা আহবান করা, “ইয়া হা’ইয়্যু, ইয়া ক্বাইয়্যুম, ইয়া যাল যালালি ওয়াল ইকরাম” (হে মর্যাদাবান ও কল্যাণময়)।

এই দুইটি নাম, আল-হা’ইয়্যু এবং আল-ক্বাইয়্যুম, ক্বুরআনের তিনটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। ইসমে আজম রয়েছে আয়াতুল কুরসীর মাঝখানে, “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়্যুল ক্বাইয়্যুম”।

অর্থঃ আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। ইসমে আজম রয়েছে সুরা আলে ইমরানের দ্বিতীয় আয়াতে, “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়্যুল ক্বাইয়্যুম”। এবং সুরা ত্বোয়া-হা, ১১১ নং আয়াত, “সমস্ত মুখমন্ডল সেই চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী সত্ত্বার সামনে অবনমিত হবে, আর যে ব্যক্তি জুলুমের বোঝা বহন করবে সে হতাশ হয়ে যাবে।”

যেই হাদীসের উপর ভিত্তি করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে-

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ক্বুরআনের তিনটি সুরার মাঝে ইসমে আজম (আল্লাহর সবচাইতে মহান নাম) রয়েছেঃ আয়াতুল কুরসী, সুরা আলে-ইমরান এবং সুরা ত্বোয়া-হা এর মাঝে।” ইবনে মাজাহঃ ৩৮৫৬, আল-হাকিমঃ ১/৬৮৬, শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ বলেনঃ “হাদীসটি হাসান।” সিলসিলাহ আস-সহীহাহঃ ৭৪৬।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশের প্রচলিত অযীফার বইগুলোতে অনেক বানোয়াট নাম আল্লাহর উপর আরোপ করা হয়েছে, যেইগুলো আসলে ইসমে আযম নয়। এই সমস্ত ভুল ও বিদআ’তপূর্ণ বই-পত্র থেকে সাবধান থাকবেন, কারণ দলীল ছাড়া কোন ইবাদত আল্লাহ তাআ’লা কবুল করেন না।

ইসমে আজম দোয়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম‘ইসমে আজম’ সম্পর্কে কিছু বিশেষ বাক্যের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, "হজরত আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ আল-আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে তার দোয়া এভাবে বলতে শুনেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি, আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।’

হাদিস থেকে আরো যে দোয়াটি বর্ণনা করা হয়েছে-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ، الْمَنَّانُ، يَا بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হা’মদু লা-ইলা-হা ইল্লা-আংতা ওয়াহ’দাকা লা-শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদীআ’স সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদ্বি, ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম। ইয়া হা’ইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি কারণ সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, আপনি সীমাহীন অনুগ্রহকারী। হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রষ্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্ত্বার ধারক!

ইসমে আজম এর ফজিলত

ইসমে আজম এর গুরত্ব হচ্ছে, এই নামে বা এই নামের ‘ওসীলা’ দিয়ে আল্লাহকে ডাকলে বা তাঁর কাছে দুয়া করলে আল্লাহ সবচাইতে বেশি খুশি হন, এবং বান্দার দুয়া কবুল করে নেন। ইসমে আজম এর উসীলা দিয়ে কোন দুয়া করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করে নেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে সালাতে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর পূর্বে (দুয়া মাসুরা পড়ার সময়) নিচের এই দুয়াটি পড়তে শুনলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তখন সাহাবাদেরকে বললেন, “তোমরা কি জানো সে কিসের উসীলা দিয়ে দুয়া করেছে?”

সাহাবারা বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন।” তিনি বললেন, “সেই মহান সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাঁর “ইসমে আজম ” বা সুমহান নামের উসীলা দিয়ে দুয়া করেছে। ইসমে আজম এর উসীলায় দুয়া করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করে নেন, আর কোনো কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা দান করেন।”

আবু দাউদ, নাসায়ী, আহমাদ, বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, ত্বাবারানী ও ইবনে মান্দাহ “আত-তাওহীদ” গ্রন্থে (৪৪/২, ৬৭/১, ৭০/১-২), একাধিক সহীহ হাদীসে এসেছে। 

দুয়াটি হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ، الْمَنَّانُ، يَا بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হা’মদু লা-ইলা-হা ইল্লা-আংতা ওয়াহ’দাকা লা-শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদীআ’স সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদ্বি, ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম। ইয়া হা’ইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি কারণ সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, আপনি সীমাহীন অনুগ্রহকারী। হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রষ্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্ত্বার ধারক!

ইসমে আজমের এই দুয়াটা আপনারা হিসনুল মুসলিম বইয়ের সালাম ফেরানোর পূর্বে পঠিত দুয়া অধ্যায়ের ১০০-১০১ পৃষ্ঠায় পাবেন।

ইসমে আজম দোয়া পড়ার নিয়ম

মুনাজাতের মাঝে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করবেন, অতঃপর দুরুদ পড়বেন, অতঃপর উপরে বর্ণিত ইসমে আযমের দুয়াটা পড়ে এরপরে আপনার প্রয়োজনীয় যেকোন দুয়া করতে হবে। বাংলা বা আরবীতে যেকোন ভাষাতেই দুয়া করা যাবে।

উল্লেখ্য, কেউ যদি এই দুয়াটা সম্পূর্ণ মুখস্থ করতে না পারে তাহলে সংক্ষেপে শুধুমাত্র “ইয়া হা’ইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম, ইয়া যাল যালালি ওয়াল ইকরাম” এই নামে আল্লাহকে ডেকে দুয়া করতে পারবেন।


সবশেষে বলা যায় যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও। আশা করি এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। যদি সম্পূর্ণ পোস্টটি মনে করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি জেনে গেছেন ইসমে আজম কি এবং ইসমে আজম এর ফজিলত সম্পর্কে। সকলেই এভাবে আমল করার চেষ্টা করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

SM TECHY এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url